Description
তাফহীমুল কুরআন
তাফহীমুল কুরআন pdf ছারাও পড়তে পারেন কোরআন শরিফের তাফসির। ২০ টির অধিক তাফসীর ডাউনলোড ও পবিত্র কোরআন শরীফ এর ১১৪ টি সুরা বাংলা অনুবাদ ও mp3 সহ
তাফহীমুল কুরআন pdf
- তাফহীমুল কোরআন (১ম খন্ড)
- তাফহীমুল কোরআন (২য় খন্ড)
- তাফহীমুল কোরআন (৩য় খন্ড)
- তাফহীমুল কোরআন (৪র্থ খন্ড)
- তাফহীমুল কোরআনত ৫ম খন্ড)
- তাফহীমুল কোরআন (৬ষ্ঠ খন্ড)
- তাফহীমুল কোরআন ৭ম খন্ড)
- তাফহিমুল কোরআন (৮ম খন্ড)
- তাফহীমুল কোরআন (৯ম খন্ড)
- তাফহীমুল কোরআন (১০ম খন্ড)
- তাফহীমুল কোরআন (১১ তম খন্ড)
- তাফহিমুল কোরআন (১২ তম খন্ড)
- তাফহীমুল কোরআন (১৩ ৩ম খন্ড)
- তাফহীমুল কোরআন (১৪ তম খন্ড)
- তাফহিমুল কোরআন (১৫ তম খন্ড)
- তাফহীমুল কোরআন (১৬ তম খন্ড)
- তাফহীমুল কোরআন (১৭ তম খন্ড)
- তাফহীমুল কোরআন (১৮ তম খন্ড)
- তাফহীমুল কোরআন (১৯ তম খন্ড)
তাফহীমুল কুরআন সূরা বাকারা ও সুরা আল ফাতিহা – ১ম খন্ড
বিষয়বস্তু – সুরা আল ফাতিহা
আসনে এ নটি বে এবাছে দোয! হে কোন বাজি ‘& উহা পড়তো তির রে
আল্লাহ্ প্রথমে তাকে এ দোয়াটি শিিয়ে দেন। গ্রন্থের শুরুতে এর স্থান দেয়ার অথই হচ্ছে
এই যে, যদি যথার্থই এ গ্রন্থ থেকে তৃমি লাভবান হতে চাও, তাহলে নিখিল
বিশ্ব-জাহানের মালিক আল্লাহর কাছে দোয়া এবং সাহায্য প্রার্থনা করো।
মানুষের মনে যে বন্ডুটির আকাংথা ও চাহিদা থাকে শ্বভাবত মানুষ সেটিই চায় এবং
সে জন্য দোয়া করে। আবার এমন অবস্থায় সে এই দোয়। করে যখন অনুভব করে যে, যে
সম্ভার কাছে সে দোয়া করছে তার আকার্ধখত বস্তুটি তারই কাছে আছে! কাজেই
সাজের গরুতে ৪ যারা নিক ভি যেন মানুকে বানিয়ে “দ্যা তে, সত্য
পথের সন্ধান লাভের জন্য এ গ্রন্থটি পড়, সত্য অনুসন্ধানের মানসিকতা নিয়ে এর পাতা
ওলটাও এবং নিখিল রিশ্ব-জাহানের মালিক ও প্রভূ আল্লাহ হচ্ছেন জ্ঞানের একমাত্র
উতস-_একথা জেনে নিয়ে একঘাত্র তার কাছেই পথনির্দেশনার আর্জি পেশ করেই এ
গ্রন্থটি পাঠের সৃচনা কর?
এ বিষয়টি অনুধাবন করার পর একথা সুস্পষ্ট হয়ে যায় যে, কুরআন ও সুরা ফাতিহার
মধ্যকার আসল সম্পর্ক কোন বই ও তার ভূমিকার সম্পর্কের পর্যায়ভুক্ত লয়। বরং এ
সম্পর্কটি দোয়া ও দোয়ার জবাবের পধায়ভুক্ত। সূরা ফাতিহা বান্দার পণ থেকে একটি
দোয়া। আর বুরমান তার জবাব আ্লাহর পক্ষ থেকে। বান্না দোয়া করে, হে মহান প্র!
আমাকে পথ দেখাও । জবাবে মহান প্রভু এই বলে সমগ্র খুন তার সামনে রেখে দেন
-এই নাও সেই হিদায়াত গু পথের দিশ! যে জন্য ভূমি আমার কাছে আবেদন জানিয়েছ।
বিষয়বস্তু – সুরা আল বাকারা
লাঘিলের উদ্পলক্ষ
এ সুরাটি বুঝতে হলে প্রথমে এর এরতিহাসিক পটভূমি ভালোভাবে বুঝে নিতে হবে।
(১) হিঅরাতের আগে ইসলামের দাওয়াতের কাজ চলছিল কেবল মন্কায়। এ সময়
পর্যন্ত সধ্বোধন করা হচ্ছিল কেবলমাত্র আরবের মুশরিকদেরকে। তাদের কাছে ইসলামের
বাণী ছিল সম্পূর্ণ নতুন ও অপরিচিত। এখন হিজরাতের পরে ইহুদিরা সামনে এসে গেল।
তাদের জনবসতিগুলো ছিল মদীনার সাথে একেবারে লাগানো। তারা তাওহীদ, রিসালাত,
অহী, আখেরাত ও ফেরেশতার স্বীকৃতি দিত।
আলাইহিস সালামের ওপর যে শরিয়াতী বিধান
নীতিগতভাবে তারাও সেই দীন ইসলামের অনুসারী ছিল যার শিক্ষা হযরত মুহাম্মাদ
সললান্লাহ আলাইহি ওয়া সান্লাম দিয়ে চলছিলেন। কিন্তু বহু
ও অবনতির ফলে তারা আসল দীন থেকে অনেক দূরে সরে গিয়েছিল।১ তাদের
আকীদা-বিশ্বাসের মধ্যে বহু অনৈসলামী বিষয়ের অনুপ্রবেশ ঘটেছিল। ভাওরাতে এর কোন
ভিত্তি ছিল না। তাদের কর্মজীবনে এমন অসংখ্য রীতি-পদ্ধতির প্রচলন ঘটেছিল যথার্থ
দীনের সাথে যেগুলোর কোন সম্পর্ক ছিন না। তাওয়াতের মূল বিষয়বস্তুর সাথেও
এগুলোর কোন সামঞ্পসা ছিল না। আল্লাহর কালাম তাওরাতের মধ্যে তারা মানুষের কথা
মিশিয়ে দিয়েছিল। শাব্দিক বা অর্থগত দিক দিয়ে আল্লাহর কালাম যতটুকু পরিমাণ
সংরক্ষিত ছিল তাকেও তারা নিজেদের মনগড়া ব্যাখ্যা বিশ্রেষণের মাধ্যমে বিকৃত করে
দিয়েছিল? দীনের যথার্থ প্রাণবন্ত তাদের মধ্য থেকে অন্তরহিত হয়ে শিয়েছিল। লোক
দেখানো ধার্মিকতার নিছক একটা নিষ্প্রাণ খোলসকে তারা বুকের সাথে আঁকড়ে ধরে
রেখেছিল। তাদের উলামা, মাশায়েখ, জাতীয় নেতৃবৃন্দ ও জনগণ-_সবার আকীদা-বিশ্বাস
এবং নৈতিক ও বাস্তব কর্ম জীবন বিকৃত হয়ে গিয়েছিল। নিজেদের এই বিকৃতির প্রতি
তাদের আসক্তি এমন পর্যায়ে পৌঁছে গিয়েছিল যার ফলে কোন প্রকার সংস্কার সংশোধন
গ্রহণের তারা বিরোধী হয়ে উঠেছিল। যখনই কোন আল্লাহর বান্দা তাদেরকে আল্লাহর
দীনের সরন-সোজা পথের সন্ধান দিতে আসতেন তখনই তারা তাঁকে নিজেদের সবচেয়ে
বড় দুশমন মনে করে সম্ভাব্য সকল উপায়ে তার সংশোধন প্রচেষ্টা ব্যথ্থ করার জন্য উঠে
পড়ে লাগতো। শত শত বছর ধরে ক্রুমাগতভাবে এই একই: ধারার পুনরাবৃত্তি হয়ে চলছিল।
এরা ছিল আসলে বিকৃত মুসলিম। দীনের মধ্যে বিকৃতি, দীন বহির্ভূত বিষয়গুলোর দীনের
মধ্যে অনুপ্রবেশ, ছোটখাটো বিষয় নিয়ে বাড়াবাড়ি, দলাদলি, বেশি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়কে বাদ
দিয়ে কম গুরুত্বপূর্ণ ও গুরত্ত্ুহীন বিষয় নিয়ে মাতামাতি, আল্লাহকে ভূলে যাওয়া ও
পার্ধিব লোত-লালসায় আকণ্ঠ নিমজ্জিত হয়ে যাওয়ার কারণে ভারা পতনের শেষ প্রান্তে
পৌছে গিয়েছিল! এমন কি তারা নিজেদের আসল ‘মুসলিম’ নামও ভুলে গিয়েছিল।’ নিছক
‘ইহুদি’ নামের যধ্যেই তারা নিজেদেরকে বাঁচিয়ে রেখেছিল। আল্লাহর দীনকে তারা কেবল
ইসরাঈল বংশজাতদের পিতৃসূত্রে প্রাপ্ত উত্তরাধিকারে পরিণত করেছিল। কাজেই নবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মদীনায় পৌঁছার পর ইহুদিদেরকে আসল দীনের দিকে
আহবান করার জন্য আল্লাহ তাঁকে নির্দেশ দিলেন। সূরা বাকারার ১৫ ও ১৬ রুক্’ এ
দাওয়াত সন্ধলিত। এ দু’রুক্ণতে যেভাবে ইহুদিদের ইতিহাস এবং তাদের নৈতিক ও
ধর্মীয় অবস্থার সমালোচনা করা হয়েছে এবং যেভাবে তাদের বিকৃত ধর্ম ও নৈতিকতার
উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্যের মোকাবিলায় যথার্থ দীনের মুলনীতিগুলো পাশাপাশি উপস্থাপন করা
হয়েছে, তাতে আনুষ্ঠানিক ধার্মিকতার মোকাবিলায় যথার্থ ধার্মিকতা কাকে বলে, সত্য
ধর্মের মূলনীতিগুলো কি এবং আল্লাহ্র দৃষ্টিতে কোন্ কোন্ জিনিস যথার্থ গুরুত্বের
অধিকারী তা দিবালোকের মতো সুস্পষ্ট হয়ে উঠেছে। |
তাফহীমুল কুরআন বাংলা তাফসীর – সুরা আল ইমরান
নামকরণ
এই সূরার এক জায়গায় “আলে ইমরানের” কথা বলা হয়েছে। একেই আলামত
হিসেবে এর নাম গণ্য করা হয়েছে।
নাধিলের সময়-কাল ও বিষয়বস্তুর অংশসমূহ
প্রথম ভাষণটি সূরার প্রথম থেকে শুরু হয়ে চতুর্থ রুকৃ*র প্রথম দু: আয়াত পর্যন্ত
চলেছে এবং এটি সম্ভবত বদর যুদ্ধের’ নিকটবর্তী সময়ে নাধিল হয়।
দ্বিতীয় ভাষণটি
আল্লাহ আদম, নৃহ, ইবরাহীমের বংশধর ও ইমরানের বংশধরদেরকে সারা
দুনিয়াবাসীর ওপর প্রাধান্য দিয়ে নিজের রিসালাতের জন্য বাছাই করে নিয়েছিলেন।) আয়াত
থেকে শুরু হয়ে বষ্ঠ রুকু’র শেষে গিয়ে শেষ হয়েছে। ৯ হিজরীতে নাজরানের প্রতিনিধি
দলের আগমনকানে এটি নাধিল হয়।
তৃতীয় ভাষণটি সপ্তম রুকৃ*র শুরু থেকে নিয়ে দ্বাদশ রুকৃণর শেষ জন্দি চলেছে। প্রথম
ভাষণের সাথে সাথেই এটি নাযিল হয় বলে মনে হয়
চতুর্থ ভাষণটি ত্রয়োদশ রন্কৃ’ থেকে শুরু করে সূরার শেষ পর্যন্ত চলেছে। ওহোদ
যুদ্ধের পর এটি নাষিল হয়।
সম্বোধন ও আলোচ্য বিষয়াবলী
এই বিভিন্ন ভাষণকে এক সাথে মিলিয়ে যে জিনিসটি একে একটি, সুগ্বাথত
ধারাবাহিক প্রবন্ধে পরিণত করেছে সেটি হচ্ছে এর উদ্দেশ্য, মূল বক্তব্য ও কেন্দ্রীয়
বিষয়বস্তুর সামক্সস্য ও একমুখীনতা। সূরায় বিশেষ করে দু’টি দলকে সম্বোধন করা
হয়েছে। একটি দল হচ্ছে, আহ্লি কিতাব (ইহুদী ও খৃষ্টান) এবং দ্বিতীয় দলটিতে রয়েছে
এমন সব লোক যারা মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের প্রতি ঈমান এনেছিল।
সূরা বাকারায় ইসলামের বাণী প্রচারের যে ধারা শুর করা হয়েছিল প্রথম দলটির কাছে
সেই একই খারায় প্রচার আরো জোরানো করা হয়েছে। তাদের আকীদাগত অরষ্টতা ও
সুরা আন নিসা – নাজিল হওয়ার সময়-কাল ও বিষয়বক্তু
এ সৃরাটি কয়েকটি ভাষণের সমষ্টি! সম্ভবত তৃতীয় হিজরীর শেষের দিক থেকে নিয়ে
টভুর্থ হিজরীর শেষের দিকে অথবা পঞ্চম হিজরীর প্রথম দিকের সময়-কালের মধ্যে
বিভিন্ন সময়ে এর বিভিন্ন অংশ নাধিল হয়। যদিও নিদিষ্ট করে বলা যাবে না, কোন আয়াত
থেকে কোন আয়াত পর্যন্ত একটি ভাষণের অন্তরভুক্ত হয়ে নাধিল হয়েছিল এবং তার
নাধিলের সময়টা কি ছিল, তবুও কোন কোন বিধান ও ঘটনার দিকে কোথাও কোথাও
এমন সব ইংগিত করা হয়েছে যার সহায়তায় রেওয়ায়াত থেকে আমরা তাদের নাধিলের
তারিখ জানতে পারি। তাই এগুলোর সাহায্যে আমরা এসব বিধান ও ইতনিত স্বদিত এ
ভাষণগুলোর মোটামুটি একটা সীমা নির্দেশ করতে পারি।-
যেমন আমরা জানি উত্তরাধিকার বন্টন ও এতিমদের অধিকার সহনিত বিধানসমূহ
ওহোদ যুদ্ধের পর নাধিল হয়। তখন সন্তর জন মুসলমান শহীদ হয়েছিলেন। এ ঘটনাটির
ফলে মদীনার ছোট জনবসতির বিভিন্ন গৃহে শহীদদের মীরাস কিভাবে বন্টন করা হবে
এবং তারা যেসব এতিম ছেলেমেয়ে রেখে গেছেন তাদের স্বার্থ কিভাবে সংরক্ষণ করা
হবে, এ প্রশ্ন বড় হয়ে দেখা দিয়েছিল। এরি ভিত্তিতে আমরা অনুমান করতে পারি, প্রথম
চারটি রুকূ’ ও পম রুকু” প্রথম তিনটি আয়াত এ সময় নাধিল হয়ে থাকবে।
যাতৃর রিকা’র যুদ্ধে ভয়ের নামায যুদ্ধ চলা অবস্থায়. নামায পড়া) পড়ার রেওয়ায়াত
আমরা হাদীসে পাই। এ যুদ্ধটি চতুর্থ হিজরীতে সংঘটিত হয়। তাই এখানে অনুমান করা
যেতে পারে, যে ভাষণে (১৫ রুকু”) এ নামাযের নিয়ম বর্ণনা করা হয়েছে সেটি এরি
কাছাকাছি সময়ে নাযিল হয়ে থাকবে।
চতুর্থ হিজরীর রবীউল আউয়াল মাসে মদীনা থেকে বনী নযীরকে বহিষ্কার করা হয়।
তাই যে ভাষণটিতে ইহুদীদেরকে এ মর্মে সর্বশেষ সতর্কবাণী শুনিয়ে দেয়া হয়েছিল যে,
“আমি তোমাদের চেহারা বিকৃত করে পেছন দিকে ফিরিয়ে দেবার আগে ঈমান আনো,»
সেটি এর পূর্বে কোন নিকটতম সময়ে নাধিল হয়েছিল বলে শক্তিশানী অনুমান করা যেতে
পারে।
বনীল মুসতানিকের যুদ্ধের সময় পানি না পাওয়ার কারণে তায়াম্থমের অনুমতি দেয়া
হয়েছিল! আর এ যুদ্ধটি পঞ্চম হিজরীতে সংঘটিত হয়েছিল। তাই যে ভাষণটিতে (৭ম
রুকৃণ) তায়াম্মুমের কথা উল্লেখিত হয়েছে সেটি এ সময়ই নাধিল হয়েছিল মনে করতে
হবে।
তাফহীমুল কুরআন বাংলা অনুবাদ ৩য় খন্ড – সুরা আল মায়েদাহ ও আনআম
সুরা আল মায়েদাহ -আলোচ্য বিষয়সমুহ
এ ছিন্ন সূরা মা-য়েদাহ নাযিল হওয়ার প্রেক্ষাপট। নিম্নলিখিত তিনটি .বড় বড় বিষয় এ
সূরাটির অন্তরতুক্ত £
এক $ মুসলমানদের ধর্মীয়, তামাদ্দুনিক, সা্ৃতিক ও রাজনৈতিক জীবন সম্পর্কে
আরো কিছু বিধি নির্দেশ। এ প্রসংগে হজ্জ সফরের রীতি-পদ্ধতি নির্ধারিত হয়। ইসলামী
নিদর্শনগুলোর প্রতি সম্মান প্রদর্শন এবং কাবা যিয়ারতকারীদেরকে কোন প্রকার বাধা না
দেবার হুকুম দেয়া হয়। পানাহার দ্রব্য সামগ্রীর মধ্যে হালাল ও হারামের চূড়ান্ত সীমা
প্রবর্তিত হয়। জাহেলী যুগের মনগড়া বাধা নিষেধগুলো উঠিয়ে দেয়া হয়। আহলি
কিতাবদের সাথে পানাহার ও তাদের মেয়েদের বিয়ে করার অনুমতি দেয়া হয়। অযু,
গোসল ও তায়াম্মুম ফরার রীতি পদ্ধতি নির্ধারিত হয়। বিদ্রোহ ও অরাজকতা সৃষ্টি এবং
চুরি-ডাকাতির শাস্তি প্রবর্তিত হয়। মদ ও জুয়াকে চূড়ান্তভাবে হারাম ও নিষিদ্ধ করা হয়।
কসম ভাঙার কাফ্ফারা নির্ধারিত হয়। সাক্ষ প্রদান আইনের আরো কয়েকটি ধারা প্রবর্তন
করা হয়।
দুই £ মুসলমানদেরকে উপদেশ প্রদান। এখন মুসলমানরা একটি শাসক গোষ্টীতে
পরিণত হয়ে যাওয়ায় তাদের হাতে ছিল শাসন শক্তি। এর নেশায় বহু জাতি পথগরষ্ট হয়।
মজলুমীর যুগের অবসান ঘটতে যাচ্ছিল এবং তার চাইতে অনেক বেশী কঠিন পরীক্ষার
যুগে মুসলমানরা পদার্পণ করেছিল। তাই তাদেরকে সম্বোধন করে বারবার উপদেশ দেয়া
হয়েছে £ ন্যায়, ইনসাফ ও ভারসাম্যের নীতি অবলম্বন করো। তোমাদের পূর্ববর্তী আহ্লি
কিতাবদের মনোভাব ও নীতি পরিহার করো। আল্লাহর আনুগত্য এবং তীর হুকুম ও আইন
“কানুন মেনে চলার যে অংশীকার তোমরা করেছে৷ তার ওপর অবিচল থাকো। ইহুদী ও
খৃষ্টানদের মতো তার সীমালংঘন করে তাদের মতো একই পরিণতির শিকার হয়ো না।
নিজেদের যাবতীয় বিষয়ের ফায়সালার জন্য আল্লাহর কিতাবের অনুসরণ করো। মুনাফিকী
নীতি পরিহার করো।
তিন $ ইহদী ও খুষ্টানদেরকে উপদেশ প্রদান। এ সময় ইহুদীদের শক্তি খর্ব হয়ে গেছে।
উত্তর আরবের প্রায় সমস্ত ইহুদী জনপদ মুসলমানদের পদানত। এ অবস্থায় তাদের অনুসৃত
্রান্ত নীতি সম্পর্কে তাদেরকে আর একবার সতর্ক করে দেয়া হয়। তাদেরকে সত্য-সঠিক
পথে আসার দাওয়াত দেয়া হয়। এ ছাড়া যেহেতু হোদাইবিয়ার চুক্তির কারণে সমগ্র আরবে
ও আশপাশের দেশগুলোয় ইসলামের দাওয়াত প্রচারের সুযোগ্ সৃষ্টি হয়ে গিয়েছিল তাই
রকেও ব্যাপকভাবে সহবোধন করে তাদের বিশ্বাসের ত্রান্তিগুলো জানিয়ে দেয়া হয়
এবং শেষ নবীর প্রতি ঈমান আনার জন্য তাদেরকে আহবান জানানো হয়। যেসব প্রতিবেশী
দেশে মূর্তিপূজারী ও অগ্নি উপাসক জাতির বসবাস ছিল সেসব দেশের অধিবাসীদেরকে
সরাসরি সম্বোধন করা হয়নি। কারণ ইতিপূর্বে তাদের সমমনা আরবের
সম্বোধন করে মকায় যে হেদায়াত নাধিল হয়েছিল তা-ই তাদের জন্য যথেষ্ট ছিল।
সুরা আল আনআম – আনলোচ্য বিষস্ম
এহেন পটভূমিতে এ ভাষণটি নাধিল হয়। এ হিসেবে এখানে জালোচ্য বিষয়গুলোকে
প্রধান সাতটি শিরোনামে ভাগ করা যেতে পারে £
এক £ শিরককে খণ্ডন করা ও তাওহীদ বিশ্বাসের দিকে আহবান জানানো।
দুই £ আখেরাত বিশ্বীসের প্রচার এবং এ দুনিয়ার জীবনটাই সবকিছু এ তুল চিন্তার
অপনোদন।
তিন £ জাহেলীয়াতের যে সমস্ত ভ্রান্ত কাল্পনিক বিশ্বাস ও কুসংক্কারে লোকেরা ডুবে
ছিল তার প্রতিবাদ করা।
চার ঃ যেসব বড় বড় নৈতিক বিধানের ভিত্তিতে ইসলাম তার সমাজ কাঠামো গড়ে
তুলতে চায় সেগুলো শিক্ষা দেয়া।
: পাঁচ £ নবী সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও তীর দাওয়াতের বিরদ্ধে উত্থাপিত
লোকদের বিভিন্ন আপত্তি ও প্রশ্নের জবাব।
ছয় £ সুদীর্ঘ প্রচেষ্টা ও সাধনা সত্ত্বেও দাওয়াত ফলপ্রসূ না হবার কারণে নবী সার্লাল্লাহ
আলাইহি ওয়া সালাম ও সাধারণ মুসলমানদের মধ্যে যে অস্থিরতা ও হতাশাজনক
অবস্থার সৃষ্টি হচ্ছিল সে জন্য তাদেরকে সান্তনা দেয়া।
সাত £ অস্বীকারকারী ও. বিরোধী পক্ষকে তাদের গাফলতি, বিস্বলতা ও অজ্ঞানতা
প্রসৃত আত্মহত্যার কারণে উপদেশ দেয়া, ভয় দেখানো ও সতর্ক করা।
কিন্তু এখানে যে ভাষণ দেয়া হয়েছে তাতে এক একটি শিরোনামের আওতায় আলাদা
আলাদাভাবে একই জায়গায় পূর্ণাঙ্গরূপে আলোচনা করার রীতি অনুসৃত হয়নি। বরং ভাষণ
এগিয়ে চলেছে নদীর স্রোতের মতো মুক্ত অবাধ বেগে আর তার মাঝখানে এ
শিরোনামগ্ডলো বিভিন্ন সময় বিভিন্নভাবে ভেসে উঠেছে এবং প্রতিবারেই নতুন নতুন
ভংগীতে এর ওপর আলোচনা করা হয়েছে।
তাফহীমুল কুরআন অনলাইন ৪র্থ খন্ড – সুরা আল আরাফ ও আনফাল
সুরা আল আরাফ – আলোচ্য বিষয়
এ সূরার ভাষণের কেন্দ্রীয় বিষয়বন্ধু হচ্ছে রিসালাতের প্রতি ঈমান আনার দাওয়াত।
আল্লাহ প্রেরিত রসূলের আনুগত্য করার জন্য শ্রোতাদেরকে উদ্দদ্ধ করাই এর সমগ্র
আলোচনার মৌল উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য। কিন্তু এ দাওয়াতে সতর্ক করার ও ভয় দেখানোর
ভাবধারাই ফুটে উঠেছে বেশী করে। কারণ এখানে যাদেরকে সম্বোধন করা হয়েছে অর্থাৎ
মকাবাসী) তাদেরকে বুঝাতে বুঝাতে দীর্ঘকাল অতিবাহিত হয়ে গিয়েছিল। তাদের স্থুল
শ্রবণ ও অনুধাবন শক্তি, হঠকারিতা, গোয়ার্তুমী ও একগুঁয়ে মনোভাব চূড়ান্ত পর্যায়ে
পৌছে গিয়েছিল। যার ফলে রসূলের প্রতি তাদেরকে সঘোধন করা বন্ধ করে দিয়ে
অন্যদেরকে সম্বোধন করার হুকুম অচিরেই নাধিল হতে যাচ্ছিল। তাই বুঝাবার ভংগীতে
নবুওয়াত ও রিসালাতের দাওয়াত পেশ করার সাথে সাথে তাদেরকে একথাও জানিয়ে
দেয়া হচ্ছে যে, নবীর মোকাবিলায় তোমরা যে কর্মনীতি অবলঘ্ধন করেছো তোমাদের .
আগের বিভিন্ন মানব সম্প্রদায়ও নিজেদের নবীদের সাথে অনুরূপ আচরণ অবলম্বন করে
অত্যন্ত মারাত্বক পরিণতির সম্মুণীন হয়েছিল। তারপর বর্তমানে যেহেতু তাদেরকে যুক্তি
প্রমাণ সহকারে দাওয়াত দেবার প্রচেষ্টা চূড়ান্ত পর্যায়ে উপনীত হতে চলেছে। তাই ভাবণের
শেষ অংশে তাদের দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে আহলি কিতাবদেরকে সব্োধন করা হয়েছে
আর এক জায়গায় সারা দুনিয়ার মানুষকে সাধারণভাবে সম্বোধন করা হয়েছে। এ থেকে
এরূপ আভাস পাওয়া যাচ্ছে যে, এখন হিজরত নিকটবতী এবং নবীর জন্য তার নিকটতর
লোকদেরকে সম্বোধন করার যুগ শেষ হয়ে আসছে।
এ ভাষণের এক পর্যায়ে ইহুদিদেরকেও ‘সযোধন করা হয়েছে। তাই এই সাথে
রিসালাত ও নবুওয়াতের দাওয়াতের আর একটি দিকও সুস্পষ্ট করে ভূলে ধরা হয়েছে।
নবীর প্রতি ঈমান আনার পর তাঁর সাথে মুনাফিবী নীতি অবলম্বন করার, আনুগত্য ও
অনুসৃতির অংগীকার করার পর তা ভংগ করার এবং সত্য ও মিথ্যার পার্থক্য সম্পর্কে
অবহিত হয়ে যাওয়ার পর মিথ্যার প্রতি সাহায্য সহযোগিতা দানের কাজে আপাদমস্তক
ভুবে থাকার পরিণাম কি, তাও এতে জানিয়ে দেয়া হয়েছে।
সূরার শেষের দিকে ইসলাম প্রচারের কৌশল সম্পর্কে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম ও তাঁর সাহাবীদেরকে কতিপয় গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশ দেয়া হয়েছে। বিরুদ্ধবাদীদের
উত্তেজনা সৃষ্টি এবং নিপীড়ন ও দমনমূলক কার্যকলাপের মোকাবিলায় ধৈর্য ও সহিষ্ুতার
নীতি অবল্ন এবং আবেগ-উত্তেজনার বশে মুল উদ্দেশ্যকে স্ষতিগ্স্ত করতে পারে এমন
কোন পদক্ষেপ গ্রহণ না করার জন্য তাদেরকে বিশেষভাবে উপদেশ দেয়া হয়েছে।
সুরা আল আনফাল – আলোচ্য বিষয়
কুরআনের এ সৃরাটিতে এ এতিহাসিক যুদ্ধের ঘটনাবলী পর্যালোচনা করা হয়েছে। কিন্তু
দুনিয়ার রাজা বাদশাহরা যুদ্ধ জয়ের পর যেতাবে নিজেদের সেনাবাহিনীর পর্যালোচনা করে
থাকেন এ পর্যালোচনার ধারাটি তা থেকে সম্পূর্ণ তিন্তর।
মুসলমানরা খাতে তাদের নৈতিক ক্রুটিগুপো দূর করার জন্য প্রচেষ্টা চালাতে পারে, সে
উদ্দেশ্যে এখানে সর্বপ্রথম সে সব নৈতিক ক্রটি নির্দেশ করা হয়েছে। যেগুলো তখনো পর্যন্ত
মুসলমানদের মধ্যে বিরাজমান ছিল। তারপর তাদের ছ্বানানো হয়েছে, এ বিজয়ে আল্লাহর
সাহায্য ও সমর্থন কি পরিমাণ ছিল! এর ফলে তারা নিজেদের সাহসিকতা ও
শৌর্য-বীর্যের মিথ্যা গরীমায় স্ফীত না হয়ে বরং এ থেকে আল্লাহর প্রতি নির্ভরতা এবং
আল্লাহ ও রসূলের আনুগত্যের শিক্ষা গ্রহণ করতে সক্ষম হবে।
এরপর যে নৈতিক উদ্দেশ্যে মুসলমানদের হক ও বাতিলের এ সংঘাত সৃষ্টি করতে
হবে তা সুস্পষ্ট করে তুলে ধরা হয়েছে। এই সংগে এ সংঘাতে যেসব নৈতিক গুণের
সাহায্যে তারা সাফল্য লাভ করতে পারে সেগুলো বিশ্লেষণ করা হয়েছে।
তারপর মুনাফিক, বরন নো বহর নহি দাতের
সঙ্বোধন করে অত্যন্ত শিক্ষণীয় বক্তব্য তুলে ধরা হয়েছে।
জনিনারনাররারালরাগজগাগি রান
নির্দেশ দেয়া হয়েছে। সেগুলোকে যেন তারা নিজেদের নয় বরং আল্লাহর সম্পদ মনে করে
আল্লাহ তার মধ্য থেকে তাদের জন্য যতটুকু অংশ নির্ধারিত করেছেন ঠিক ততটুকুই যেন
তারা কৃতজ্ঞতা সহকারে গ্রহণ করে নেয় এবং আল্লাহ নিজের কাজের জন্য এবং নিজের
গূরীব বান্দাদের সাহায্য করার জন্য যতটুকু অংশ নিদিষ্ট করেছেন সন্তোষ ও আগ্রহ
সহকারে যেন তা মেনে নেয়।
এরপর যুদ্ধ ও সন্ধি সম্পর্কে কতিপয় নৈতিক বিধান দেয়া হয়েছে। ইসলামী দাওয়াতের
এ পর্যায়ে এগুলো ছিল একান্ত জরুরী । এর মাধ্যমে নিজেদের যুদ্ধ বিগ্রহ ও সন্ধির ক্ষেত্রে
মুসলমানরা জাহেলী পদ্ধতি থেকে দূরে থাকতে পারবে এবং দুনিয়ার ওপর তাদের নৈতিক
শ্রেষ্ঠত্ব প্রতিষ্ঠিত হবে। এ সংগে সারা, দুনিয়াবাসী একথা জানতে সক্ষম হবে যে,
ইসলাঘ তার আবির্ভাবের প্রথম দিন থেকেই নৈতিকতার ওপর. বাস্তব জীবনের ভিত্
কায়েম করার যে দাওয়াত দিয়ে আসছে তার নিজের বাস্তব জীবনেই সে যথার্থই তা
কার্ধকর করেছে।
সবশেষে ইসলামী রাষ্ট্রের শাসনতান্ত্রক আইনের কতিপয় ধারা বর্ণনা করা হয়েছে এতে
দারুল ইসলামের মুসলমান অধিবাসীদের আইনগত মর্যাদা দারুল ইসলামের সীমানার
বাইরে অবস্থানকারী মুসলমানদের থেকে জালাদা করে দেয়া হয়েছে।
তাফহীমুল কুরআন ডাউনলোড ৫ম খন্ড – সুরা তাওবা ও সুরা ইউনুস
আলন্লোচ্য বিষস্স ও সমস্যাবলী – সুরা তাওবা
এ পটভূমি সামনে রেখে আমরা সে সময় যেসব বড় বড় সমস্যা দেখা দিয়েছিল বং
সুরা তাওবায় যেগুলো আলোচিত হয়েছে, সেগুলো সহজেই চিহিত করতে পারি। সেগুলো
হচ্ছে। –
১। এখন যেহেতু সমথ আরবের শাসন ক্ষমতা সম্পূরণবূপে মুমিনদের হাতে এসে
গিয়েছিল এবং সমন্ত প্রতিবন্ধক শক্তি নিভীব ও লিভেজ হয়ে পড়েছিল, ভাই আরবদেশকে
পূর্ণাঙ্গ দারুন ইসলামে পরিণত করার জন্য যে নীতি অবল্যন করা অপরিহার্য ছিল তা
সুস্পষ্টভাবে বিকৃত করতে আর বিন করা চলে না। তাই নিম্রোস্ত আকারে তা পেশ করা
হয় £
কে) আরব“থেকে শিরককে চূড়ান্তভাবে নির্মূল করতে হবে। প্রাচীন মুশরিকী ব্যবস্থাকে
পুরোপুরি খতম করে ফেলতে হবে। ইসলামের কেন্ত্র যেন চিরকালের জন্য নির্ভেজাল
কেন্দ্রে পরিণত হয়ে যায়, তা নিশ্চিত করতে হবে। অন্য কোন অনৈসলামী
উপাদান যেন সেখানকার ইসলামী মেজায ও. প্রকৃতিতে অনুপ্রবেশ করতে এবং কোন
বিপদের সময় আভ্যন্তরীণ ফিত্নার কারণ হতে না পারে। এ উদ্দেশ্যে মুশরিকদের সাথে
সব রকমের সম্পর্ক ছিন্ন করার এবং তাদের সাথে সম্পাদিত চুক্তিসমূহ বাতিল করার
কথা ঘোষণা করা হয়।
খ) কাবা ঘরের ব্যবস্থাপনা মুমিনদের হাতে এসে যাবার পর, একান্তভাবে আল্লাহর
বন্দেশী করার জন্য উৎসগীত সেই ঘরটিতে আবারো আগের মত মূর্তিপূজা হতে থাকবে
এবং তার পরিচালনা ও পৃষ্ঠপোষকতার দায়িত্ব এখনো মুশরিকদের হাতে বহান
থাকবে, এটা কোনক্রমেই সংগত হতে পারে না। ভাই হুকুম দেয়া হয় £ আগামীতে কাবা
ঘরের পরিচালনা ও অভিভাবকততের দায়িত্বও ভাওহীদবাদীদের হাতেই ন্যা্ত থাকা চাই। |
আর এ সংগে বায়ভুল্লাহর চত্সীমার মধ্যে শিরক ও জাহেলীয়াতের যাবতীয়
রসম-রেওয়াজ বল প্রয়োগে বন্ধ করে দিতে হবে। বরং এখন থেকে মুশরিকরা আর এ
ঘরের ত্রিসীমানায় ঘসতে পারবে না। ভাওহীদের মহান অগ্রণী পুরুষ ইবরাহীমের হাতে
গড়া এ গৃহটি আর শিরক দ্বারা কলুষিত হতে না পারে তার পাকাপোক্ত ব্যবস্থা করতে
হবে।
(গ) আরবের সাংস্কৃতিক জীবনে জাহেনী রসম রেওয়াজের যেসব চিহ এখনো অন্ন
ছিন নতুন ইসলামী যুগে সেগুলোর প্রচলন থাকা কোনক্রমেই সমিটীন ছিল না। তাই সেগুলো
নিশ্চিহ্ন করার প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়েছে। “নাসী* [ইচ্ছাকৃতভাবে হারাম মাসকে
হানাল ও হানাল মাসকে হারাম নির্দিষ্ট করে নেয়ার নিয়টা ছিল সবচেয়ে খারাপ প্রথা।
ভাই তার ওপর সরাসরি আঘাত হানা হয়েছে। এ আঘাতের মাধ্যমে জাহেলীয়াতের অন্যান্য
নিদর্শনগুলোর ব্যাপারে মুসলমানদের করণীয় কী। তাও জানিয়ে দেয়া হয়েছে।
২। আরবে ইসলাম প্রতিষ্ঠার কার্যক্রম পূর্ণতায় পৌঁছে যাবার পর সামনে যে দ্বিতীয়
গুরুত্বপূর্ণ পর্যায়টি ছিল সেটি হলো, আরবের বাইরে আল্লাহর সত্য দীনের প্রভাব-বলয়
বিস্তৃত করা। এ পথে রোম ও ইরানের রাজনৈতিক শক্তি ছিল সবচেয়ে বড় প্রতিবন্ধক!
আরবের কার্যক্রম শেষ হবার পরই তার সাথে সংঘর্ষ বাধা ছিল অনিবার্ধ। তাছাড়া পরবর্তী
পর্যায়ে অন্যান্য অমুসলিম রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক ব্যবস্থাগুলোর সাথেও এমনি ধরনের,
সংঘাত ও সংঘর্ষের সৃষ্টি হওয়া ছিন স্বাভাবিক। তাই মুসলমানদের নির্দেশ দেয়া হয়,
আরবের বাইরে যারা সত্য দীনের অনুসারী নয়, ভারা ইসলামী কর্তৃত্বের প্রতি বশ্যতা ও
আনুগত্যের স্বীকৃতি না দেয়া পর্যন্ত শক্তি প্রয়োগ করে তাদের স্বাধীন ও সার্বভৌম শাসন
খতম করে দাও। অবশ্য আল্লাহর সত্য দ্বীনের প্রতি ঈমান আনার ব্যাপারটি তাদের
ইচ্ছাধীন। তারা চাইলে ঈমান আনতে পারে, চাইনে নাও আনতে পারে। কিন্তু আল্লাহর
যমীনে নিজেদের হুকুম জারি করার এবং মানব সমাজের কর্তৃত্ব ও পরিচালনা ব্যবস্থা
নিজেদের হাতে রেখে মানুষের ওপর এবং তাদের ভবিষ্যত বংশধরদের ওপর নিজেদের
গোমরাহীসমূহ জোরপূর্বক চাণিয়ে দেবার কোন অধিকার তাদের নেই। বড় জোর
তাদেরকে এতটুকু স্বাধীনতা দেয়া যেতে পারে যে, তারা নিজেরা চাইলে পথভ্রষ্ট হয়ে
থাকতে পারবে। কিন্তু সে জন্য শর্ত হচ্ছে, তাদের জিযিয়া আদায় করে ইসলামী শাসন
কর্তৃত্বের অধীন থাকতে হবে।
ও কিক জা বিষ লা হী রা সামিক বহর সার
কথা বিবেচনা করে তাদের ব্যাপারে এ পর্যন্ত উপেক্ষা ও এড়িয়ে যাবার অবলষন
করা হচ্ছিলো। এখন যেহেতু বাইরের বিপদের চাপ কমে গিয়েছিল বরৎ একেবারে ছিলই
না বালে চলে, তাই হুকুম দেয়া হয়, আগামীতে তাদের সাথে আর নরম ব্যবহার করা
যাবে না। প্রকাশ্য সত্য অস্বীকারকারীদের সাথে যেমন কঠোর ব্যবহার করা হয় তেমনি
কঠোর ব্যবহার গোপন সত্য অন্বীকারকারীদের সাথেও করা হবে। এ নীতি অনুযায়ী নবী
সালপাল্লাহ আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাবুক যুদ্ধের প্রস্তুতি পর্বে সুওয়াইলিমের গৃহে আগুন
মাগান। সেখানে মুনাফিকদের একটি দন মুসলমানদেরকে যুদ্ধে যোগদান করা থেকে
বিরত রাখার উদ্দেশ্যে প্রচারাভিযান চালাবার জন্য জমায়েত হতো। আবার এ নীতি অনুযায়ী
নবী সাললন্রাহ আলাইহি ওয়া সাল্লাম ভাবুক থেকে ফিরে আসার পর সর্বপ্রথম “মসজিদে
ছিরার” ভেংগে ফেলার ও জ্বালিয়ে দেবার হুকুম দেন।
৪ । নিষ্ঠাবান মুমিনদের কতকের মধ্যে এখনো পর্যন্ত যে সামান্য কিছু সংকলের
দুর্ববতা রয়ে গিয়েছিল তার চিকিৎসারও প্রয়োজন ছিল। কারণ ইসলাম এখন
আস্তরজাতিক প্রচেষ্টা ও সংগ্রামের ক্ষেত্রে প্রবেশ করতে চলেছে। যে ক্ষেত্রে মুসলিম
আরবকে একাকী সারা অমুসলিম দুনিয়ার বিরুদ্ধে লড়তে হবে সে ক্ষেত্রে ইসলামী
সংগঠনের জন্য ঈমানের দুর্বলতার চাইতে বড় কোন আত্যন্তরীণ বিপদ থাকতে পারে না।
ভাই তাবৃক যুদ্ধের সময় যারা অলসতা ও দুর্বলতার পরিচয় দিয়েছিল অত্যন্ত কঠোর
ভাষায় তাদের তিরস্কার ও নিন্দা করা হয়। যারা পিছনে রয়ে গিয়েছিল তাদের ন্যায়সঙ্গত
ওযর ছাড়াই পিছনে থেকে যাওয়াটাকে একটা মুনাফেকসূলভ আচরণ এবং সাচ্চা
ঈমানদার না হওয়ার সুস্পষ্ট প্রমাণ হিসেবে গণ্য করা হয়। ভবিষ্যতের জন্য দ্য্থহীন কঠে
জালিয়ে দেয়া হয়, আল্লাহর কালেমাকে বুলন্দ করার সংগ্রাম এবং কুফর ও ইসলামের
সংঘাতই হচ্ছে মুমিনের ঈমানের দাবী যাচাই করার আসল মানদণ্ড। এ সংঘর্ষে যে ব্যক্তি
ইসলামের জন্য ধন-প্রাণ, সময় ও শ্রম ব্যয় করতে ইতস্তত করবে তার ঈমান নির্ভরযোগ্য
হবে না। অন্য কোন ধমীয় কাজের মাধ্যমে এ ক্ষেত্রের কোন অভাব পূরণ করা যাবে না।
এসব বিষয়ের প্রতি নজর রেখে সূরা তাওবা অধ্যয়ন ‘করলে এর যাবতীয় বিষয় সহজে
অনুধাবন করা সম্ভব হবে।
সুরা ইউনুস – আলোচনার বিষম্মাদি
এ প্রাথমিক আলোচনার পর নিম্নোক্ত বিষয়গুলো একটি বিশেষ ধারাবাহিকতা
সহকারে সামনে আসে £
এক £ যারা অন্ধ বিদ্বেষ ও গৌঁড়ামীতে নিপ্ত হয় না এবং আলোচনায় হারজিতের
পরিবর্তে নিজেরা ভূল দেখা ও ভূল সিদ্ধান্ত গ্রহণ থেকে বাঁচার চিন্তা করে তাদের
বুদ্ধি-বিবেককে আল্লাহর একত্ব ও পরকালীন জীবন সম্পর্কে নিশ্চিন্ত করার মতো যুক্তি
প্রমাণাদি।
দুই £ লোকদের তাওহীদ ও রিসালাতের আকীদা স্বীকার করে নেয়ার পথে প্রতিবন্ধক
হিসেবে যেসব বিভ্রান্তি দেখা দিয়েছিল সেগুলো দূর করা এবং যেসব গাফলতি সৃষ্টি
হয়েছিল সেগুলো সম্পর্কে সতর্ক করে দেয়া। ৃ
তিন $ মৃহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের রিসালাত এবং তিনি যে বাণী
এনেছিলেন সেসব সম্পর্কে যে সন্দেহ ও আপত্তি পেশ করা হতো, তার যথাযথ জবাব
দান।
চার £ পরবর্তী জীবনে যা কিছু ঘটবে সেগুলো আগেভাগেই জানিয়ে দেয়া, যাতে মানুষ
সে ব্যাপারে সতর্কতা অবলম্বন করে নিজের কার্যকলাপ সংশোধন করে নেয় এবং পরে
আর তাকে সে জন্য আফসোস করতে না হয়।
পাচ £ এ ব্যাপারে সতর্ক করে দেয়া যে, এ দুনিয়ার বর্তমান জীবন আসণে একটি
পরীক্ষার জীবন। এ পরীক্ষার জন্য তোমাদের যে অবকাশ দেয়া হয়েছে তা শুধুমাত্র
ততটুকুই যতটুকু সময় তোমরা এ দুনিয়ায় শ্বাস-প্রশ্বাস নিচ্ছ। এ সময়টুকু যদি তোমরা
নষ্ট করে দাও .এবং নবীর হেদায়াত গ্রহণ করে পরীক্ষায় সাফল্য লাভের ব্যবস্থা না
করো, ভাহলে ভোমরা আর দ্বিতীয় কোন সুযোগ পাবে না। এ নবীর আগমন এবং এ
কুরআনের মাধ্যমে তোমাদের কাছে সত্য জ্ঞান পৌছে যাওয়া তোমাদের পাওয়া একমাত্র
ও সর্বোত্তম সুযোগ। একে কাজে লাগাতে না পারলে পরবর্তী জীবনে তোমাদের চিরকাল
পশ্তাতে হবে।
ছয় ৪ এমন সব সুস্পষ্ট অন্রতা, মূর্খতা ও বিভ্রান্তি চিহ্নিত করা, যা শুধুমাত্র আল্লাহর
হেদায়াত ছাড়া জীবন যাপন করার কারণেই লোকদের জীবনে সৃষ্টি হচ্ছিল।
এ প্রসঙ্গে নুহ আলাইহিস সালামের ঘটনা সংক্ষেপে এবং মূসা আলাইহিস সালামের
ঘটনা বিস্তারিতভাবে বর্ণনা করা হয়েছে। চারটি কথা অনুধাবন করানোই এ ইতিহাস
বর্ণনার উদ্দেশ্য ।
প্রথমত, মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সাথে তোমরা যে ব্যবহার
করছো তা মৃহ আ) ও মূসার (আ) সাথে তোযাদের পূর্ববর্তীরা থে ব্যবহার করেছে
অবিকল তার মতই। আর নিশ্চিত থাকো যে, এ ধরনের কার্যকলাপের যে পরিণতি তারা
ভোগ করেছে তোমরাও সেই একই পরিণতির সম্মুখীন হবে। দ্বিতীয়ত, মুহাম্মাদ
সাললান্লাহ আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও তীর সাথীদেরকে আজ তোমরা যে অসহায়ত্ব ও দুর্বল
অবস্থার মধ্যে দেখছো তা থেকে একথা মনে করে নিয়ো না যে, অবস্থা চিরকাল এ
রকমই থাকবে। তোমরা জানো না, যে আল্লাহ মূসা ও হারুণের পেছনে ছিলেন এদের
পেছনেও তিনিই আছেন। আর তিনি এমনভাবে গোটা পরিস্থিতি পান্টে দেন যা কেউ
চিন্তাও করতে পারে না। তৃতীয়ত, নিজেদের শুধরে নেয়ার জন্য আল্লাহ তোমাদের যে
অবকাশ দিচ্ছেন তা যদি তোমরা লষ্ট করে দাও এবং তারপর ফেরাউনের মতো আল্লাহর
হাতে পাকড়াও হবার পর একেবারে শেষ মুহূর্তে তাওবা করো, তাহলে তোমাদের মাফ
করা হবে না। চত্র্থত, যারা মুহাম্মাদ সালনাল্রাহু আলাইহি ওয়া সাপ্লামের ওপর ঈমান
এনেছিল তারা যেন প্রতিকূল পরিবেশের চরম কঠোরতা ও তার মোকাবিলায় নিজেদের
অসহায়ত্ব দেখে হতাশ হয়ে না পড়ে। তাদের জানা উচিত, এ অবস্থায় তাদের কিভাবে
কাজ করতে হবে। ভাদের এ ব্যাপারেও সতর্ক হতে হবে যে, আল্লাহ যখন নিজের
মেহেরবানীতে তাদেরকে এ অবস্থা থেকে উদ্ধার করবেন তখন যেন তারা বনী ইসরাঈল
মিসর থেকে মুক্তি গাওয়ার পর যে আচরণ করেছিল তেমন আচরণ না করে।
সবশেষে ঘোষণা করা হয়েছে £ এ আকীদা-বিশ্বাস অনুযায়ী এবং এ পথ ও নীতির
ভিত্তিতে এগিয়ে চলার জন্য আল্লাহ তাঁর নবীকে নির্দেশ দিয়েছেন। এর মধ্যে সামান্যতমও
কাটছাঁট করা যেতে পারে না। যে ব্যক্তি এটা গ্রহণ করবে সে নিজের ভাল করবে এবং যে
একে বর্জন করে ভুল পথে পা বাড়াবে সে নিজেরই ক্ষতি করবে।
তাফহীমুল কুরআন pdf ৬ষ্ঠ খন্ড – সুরা হুদ, ইউসুফ, আর রাদ ও ইব্রাহীম
সুরা হুদ – বিষয়বন্তর ও আলোচ্য বিষম
যেমন একটু আগেই বলেছি, ভাষণের বিষয়বস্তু সূরা ইউনূসের অনুরূপ। অর্থাৎ
দাওয়াত, উপদেশ ও সতর্কবাণী। তবে পার্থক্য হচ্ছে, সূরা ইউনূসের তুলনায় দাওয়াতের
অংশ এখানে সংক্ষিপ্ত, উপদেশের মধ্যে যুক্তির পরিমাণ কম ও ওয়াজ-নসীহত বেশী
এবং সতর্কবাণীগুলো বিস্তারিত ও বনিষ্ঠ।
এখানে দাওয়াত এভাবে দেয়া হয়েছে £ নবীর কথা মেনে নাও, শিরক থেকে
বিরত হও অন্য সবার বন্দেগী ত্যাগ করে একমাত্র আল্লাহর বান্দা হয়ে যাও এবং
গড়ে তোলো।
উপদেশ দেয়া হয়েছে £ দুনিয়ার জীবনের বাহ্যিক দিকের ওপর ভরসা করে যেসব
জাতি আল্লাহর নবীদের দাওয়াত প্রত্যাখ্যান করেছে ইতিপূর্বেই তারা অত্যন্ত ভয়াবহ
পরিণতির সম্মুখীন হয়েছে। এমতাবস্থায় ইতিহাসের ধারাবাহিক অভিজ্ঞতায় যে পথটি
ধ্বংসের গথ হিসেবে চূড়ান্তভাবে প্রমাণিত হয়েছে, সেই একই পথে তোমাদেরও চলতেই
হবে, এমন কোন বাধ্যবাধকতা আছে নাকি?
সতর্কবাণী উচ্চারিত হয়েছে £ আযাব আসতে যে দেরী হচ্ছে, তা আসলে একটা
অবকাশ মাত্র।
আল্লাহ নিজ অনুগহে তোমাদের এ অবকাশ দান করছেন। এ অবকাশকালে যদি
তোমরা সংযত ও সংশোধিত না হও তাহলে এমন আযাব আসবে যাকে হটিয়ে দেবার
সাধ্য কারোর নেই এবং যা ঈমানদারদের ক্ষুদ্রতম দলটি ছাড়া রাকি সমগ্র জাতিকে
দুনিয়ার বুক থেকে নিশ্চিহ করে দেবে।
এ বিষয়বন্ডুটি উপলব্ধি করাবার জন্য সরাসরি সঙ্োধন করার তুলনায় জাতি,
আদ, সামুদ, লৃতের জাতি, মাদ্য়ানবাসী ও ফেরাউনের সম্পদায়ের ঘটনাবলীর সাহায্য
খ্হণ করা হয়েছে বেশী করে। এ ঘটনাবলী বর্ণনা করার ক্ষেত্রে যে বিষয়গুলো সবচেয়ে
বেশী স্পষ্ট করে তুলে ধর! হয়েছে সেগুলো হচ্ছে £ আল্লাহ্ যখন কোন বিষয়ের চূড়ান্ত
মীমাংসা করতে উদ্যত হন তখন সম্পূর্ণ নিরপেক্ষ পদ্ধতিতেই মীমাংসা করেন। সেখানে
কাউকে সামান্যতমও ছাড় দেয়া হুয় না। তখন দেখা হয় না কে কার সন্তান ও কার
আত্ীয়। যে সঠিক পথে চলে একমাত্র তার ভাগেই রহমত আসে। অন্যথায় আল্লাহর গযব
থেকে কোন নবীপুত্র বা নবী পত্রী কেউই বাঁচতে পারে না। শুধু এখানেই শেষ নয়, বরং
যখন ঈমান ও কুফরীর চূড়ান্ত ফায়সালার সময় এসে পড়ে তখন দীনের প্রকৃতির এ
দাবীই জানাতে থাকে যে, মুমিন নিজেও যেন পিতা-পুত্র ও স্থামী-সত্ীর সম্পর্ক ভূলে যায়
এবং আল্লাহর ইনসাফের তরবারির মতো! পূর্ণ নিরপেক্ষতার সাথে একমাত্র সত্যের সম্বন্ধ
ছাড়া অন্য সব সঙ্ন্ধ কেটে ছিড়ে দূরে নিক্ষেপ করে। এহেন অবস্থায় বংশ ও রক্ত সঙ্ন্ধের
প্রতি সামান্যতম পক্ষপাতিত্বও হবে ইসলামের প্রাণসন্তার সম্পর্ক বিরোধী। তিন চার বছর
পরে বদরের ময়পানে মকার মুসলমানরা এ শিক্ষারই প্রদর্শনী করেছিলেন।
তাফহীমুল কুরআন pdf download সুরা হিজর, নাহল, বনী ইসরাইল ও কাহাফ
সুরা হিজর – বিষয়বজ্তু ও কেন্দ্রীমম আন্োোচ্য বিহ্বক্স
এই দু”টি বিষয়বন্তুই এ সূরায় আলোচিত হয়েছে। অর্থাৎ নবী সান্লান্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লামের দাওয়াত যারা অস্বীকার করছিল, যারা তাকে বিবৃপ করছিল এবং তাঁর কাজে
ন’না প্রকার বাধার সৃষ্টি করে চলছিল, তাদেরকে সতর্ক করা হয়েছে। আর খোদ নবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে সান্তনা ও সাহস যোগানো হয়েছে। কিন্তু এর মানে এই
নয় যে, বুঝাবার ও উপদেশ দেবার ভাবধারা নেই। কুরআনে আল্লাহ শুধুমাত্র সতর্কবাণী
উচ্চারণ বা নির্ভেজাল ভীতিপ্রদর্শনের পথ অবলম্বন করেননি: কঠোরতম হুমকি ও ভীতি
প্রদর্শন এবং তিরঙ্কার ও নিন্দাবাদের মধ্যেও তিনি বুঝাবার ও নসীহত করার ক্ষেত্রে
কোন কমতি রাখেননি। এ জন্যই এ সুরায়ও একদিকে তাওহীদের যুক্রি-প্রমাণের প্রতি
সংক্ষেপে ইর্থগীত করা হয়েছে এবং অন্যদিকে আদম ও ইবলীসের কাহিনী শুনিয়ে
উপদেশ দানের কার্যও সমাধা করা হয়েছে।
নাহল – বিষয়বন্তু ও কেন্দ্রীপস আলোচ্য বিষক্স
শিরককে বাতিল করে দেয়া, তাওহীদকে সপ্রমাণ করা, নবীর আহবানে জাড়া না
দেবার অণ্ুভ পরিণতি সম্পর্কে সতর্ক করা ও উপদেশ দেয়া এবং হকের বিরোধিতা ও )
তার পথে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করার বিরুদ্ধে তাঁতি প্রদর্শন করা এ বিষয়বস্তু ও
কেন্দ্রীয় আলোচ্য বিষয়।
বনী ইসরাইল – বিঅযসবন্তু ও আলোচ্য বিষ্ক্স
এ সূরায় সতর্ক করা, বুঝানো ও শিক্ষা দেয়া এ তিনটি কাজই একটি আনুপাতিক
সতর্ক করা হয়েছে মন্কার কাফেরদেরকে। তাদেরকে বলা হয়েছে, বনী ইস্রাঈল ও
অন্য জাতিদের পরিণাম থেকে শিক্ষা গ্রহণ করো। আল্লাহর দেয়া যে অবকাশ খতম হবার
সময় কাছে এসে গেছে তা শেষ হবার আগেই নিজেদেরকে সামলে নাও। মুহাম্মাদ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও কুরআনের মাধ্যমে যে দাওয়াত পেশ করা হচ্ছে তা
খ্রহণ করো। অন্যথায় তোমাদের ধ্বংস করে দেয়া হবে এবং তোমাদের জায়গায় অন্য
লোকদেরকে দুনিয়ায় আবাদ করা হবে। তাছাড়া হিজরাতের পর যে বনী ইস্রাঈলের
উদ্দেশ্যে শীঘই অহী নাধিল হতে যাচ্ছিল পরোক্ষতাবে তাদেরকে এভাবে সতর্ক করা
হয়েছে যে, প্রথমে যে শাস্তি তোমরা পেয়েছো তা থেকে শিক্ষা গ্রহণ করো এবং এখন
মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নবুওয়াত লাভের পর তোমরা যে সুযোগ
পাচ্ছো তার সদ্বহার করো। এ শেষ সুধোগটিও যদি তোমরা হারিয়ে ফেলো এবং
এরপর নিজেদের পূর্বতন কর্মনীতির পুনরাবৃত্তি করো তাহলে ভয়াবহ পরিণামের সম্মুখীন
হবে।
মানুষের সৌভাগ্য ও দুর্ভাগা এবং কলাণ ও অকল্যাণের ভিত্তি আসনে কোন্ কোন্
জিনিসের ওপর রাখা হয়েছে, তা অত্যন্ত হৃদয়গ্াহী পদ্ধতিতে বুঝানো হয়েছে। তাওহীদ,
পরকাল, নবুওয়াত ও কুরআনের সত্যতার প্রমাণ পেশ করা হয়েছে। মক্তার কাফেরদের
পক্ষ থেকে এ মৌলিক সত্যগুলোর ব্যাপারে যেসব সন্দেহ-সংশয় পেশ করা হচ্ছিল
সেগুলো করা হয়েছে। দলীল-প্রমাণ পেশ করার সাথে সাথে মাঝে মাঝে
অজ্ঞতার জন্য তাদেরকে ধমকানো ও ভয় দেখানো হয়েছে।
শিক্ষা দেবুর পর্যায়ে নৈতিকতা ও সভ্যতা-সংস্কৃতির এমনসব বড় বড় মূলনীতির
বর্ণনা করা হয়েছে যেগুলোর ওপর জীবনের সমগ্র ব্যবস্থাটি প্রতিষ্ঠিত করাই ছিল
মুহাম্মাদ সার্লাল্লাহ আলাইহি ওয়া সাল্লামের দাওয়াতের প্রধান লক্ষ্য। :প্রটিকে- ইসলামের
ঘোষণাপত্র বলা যেতে পারে। ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার এক বছর আগে ‘আরববাসীদের
সামনে এটি পেশ করা হয়েছিল। এতে সুস্পষ্টভাবে বলে দেয়া হয়েছে যে, এটি একটি নীল
নকৃশা এব ‘এ নীল নক্শার ভিত্তিতে মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিজের
দেশের মানুষের এবং তারপর সমগ্র বিশ্ববাসীর জীবন গড়ে তুলতে চান।
এসব কথার সাথে স্মথেই আবার নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে হেদায়াত
করা হয়েছে যে, সমস্যা ও সংকটের প্রবল ঘূর্ণাবর্তে মজবৃতভাবে নিজের অবস্থানের ওপর :
টিকে থাকো এবং কুফরীর সাথে আপোশ করার চিন্তাই মাথায় এনো না। তাছাড়া
মুসলমানরা যাদের যন কখনো কখনো কাফেরদের জুলুম, নিপীড়ন, কুটতর্ক এবং
লাগাতার মিথ্যাচার ও মিথ্যা দোষারোপের ফলে বিরক্তিতে ভরে উঠতো, তাদেরকে ধৈর্য
ও নিশ্িন্ততার সাথে অবস্থার মোকাবিলা করতে থাকার এবং প্রচার ও সংশোধনের কাজে
নিজেদের আবেগ-অনুভূতিকে নিয়ন্ত্রণে রাখার উপদেশ দেয়া হয়েছে। এ ব্যাপারে
আত্সংশোধন ও আত্মসত্ঘমের জন্য তাদেরকে নামাযের ব্যবস্থাপত্র দেয়া হয়েছে। বলা
হয়েছে, এটি এমন একটি জিনিস যা তোমাদের সত্যের পথের মুজাহিদদের যেসব উন্নত
গুণাবলীতে বিভূষিত হওয়া উচিত তেমনি ধরনের গুণাবলীতে ভূষিত করবে। হাদীস
থেকে জানা যায়, এ প্রথম পাঁচ ওয়াক্ত নামায মুসলমানদের ওপর নিয়মিতভাবে ফরয
করা হয়।
তাফহীমুল কুরআনের বিষয় নির্দেশিকা ৯ম খন্ড – সুরা আল মুমিনুন ও আন নুর
সুরা আল মুমিনুন -বক্তব্য ও আলোচ্য বিন্স
ব্সূলের আনুগত্য করার আহবান হচ্ছে এ সুরার কেন্দ্রীয় বিষয়বন্তু। এখানে বিবৃত
সমগ্র ভাষণটি এ কেন্দ্রের চারদিকেই আবর্তিত।
বক্তব্যের সূচনা এভাবে হয় ঃ যারা এ নবীর কথা মেনে নিয়েছে তাদের মধ্যে অমুক
অমুক গুণাবলী সৃষ্টি হচ্ছে এবং নিশ্চিতভাবে এ ধরনের লোকেরাই দুনিয়ায় ও আখেরাতে
সাফল্য লাভের যোগ্য হয়।
এরপর মানুষের “জন্ম, আকাশ ও পৃথিবীর সৃষ্টি, উদ্ভিদ ও প্রাণীর আবির্ভাব এবং বিশ্ব
জাহানের অন্যান্য নিদর্শনাবণীর প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়েছে। এর উদ্দেশ্য হচ্ছে একথা
মনের মধ্যে গেঁথে দেয়া যে, এ মবী তাওহীদ ও আখেরাতের যে চিরত্তন সত্যশ্ুলো
তোমাদের মেনে নিতে বলছেন তোমাদের নিজেদের সন্তা এবং এই সমগ্র বিশ্ব-ব্যবস্থা
সেগুলোর চাত্যতার সাক্ষ দিচ্ছে।
তারপর নবীদের ও তাঁদের উম্মতদের কাহিনী শুরু হয়ে গেছে। আপাত দৃষ্টিতে এগুলো
কাহিনী মনে হলেও মূলত এ পদ্ধতিতে শ্রোভাদেরকে কিছু কথা বুঝানো হয়েছে £
এক £ আজ তোমরা মৃহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের দাওয়াতের ব্যাপারে
যেসব সন্দেহ পোষণ ও আপত্তি উথ্থাপন করছো সেগুলো নতুন কিছু নয়। ইতিপূর্বেও
যেসব নবী দুনিয়ায় এসেছিলেন, যাদেরকে তোমরা নিজেরাও আল্লাহর নবী বলে স্ত্ীকার
করে থাকো, তাঁদের সবার বিরুদ্ধে তাদের যুগে মূর্খ ও অজ্ঞ লোকেরা এ একই আপত্তি
করেছিল। এখন দেখো ইতিহাসের শিক্ষা কি, আপত্তি উথাপনকারীরা সভ্যপথে ছিল, না
নবীগণ?
দুই £ তাওহীদ ও আখেরাত সম্পর্কে মুহামাদ সারলান্লাহ আলাইহি ওয়া সাল্লাম যে
শিক্ষা দিচ্ছেন এই একই শিক্ষা প্রত্যেক যুগের নবী দিয়েছেন। তার বাইরে এমন কোন
অভিনব জিনিস আজ পেশ করা হচ্ছে না যা দুনিয়াবাসী এর আগে কখনো শুনেনি।
তিন $ যেসব জাতি নবীদের কথা শোনেনি এবং তাদের বিরোধিতার ওপর জিদ ধরেছে
তারা শেষ পর্যন্ত ধ্বংস হয়ে গেছে।
চার £ আল্লাহর পক্ষ থেকে প্রত্যেক যুগে একই দীন এসেছে এবং সকল নবী একই
জাতি বা উম্মাহভূক্ত ছিলেন। সেই একমাত্র দীনটি ছাড়া অন্য যেসব বিচিত্র ধর্মমত
তোমরা দুনিয়ার চারদিকে দেখতে পাচ্ছো এগুলো সবই মানুষের স্বকপোলকলিত। এর
(কোনটাও আল্লাহর পক্ষ থেকে প্রেরিত নয়।
এ কাহিনীগুলো বলার পর লোকদেরকে একথা জানানো হয়েছে যে, পার্থিব সমৃদ্ধি,
অর্থ-সম্পদ, সন্তান-সন্ততি, প্রভাব-প্রতিণত্তি, ক্ষমতা, কর্তৃত্ব এমন জিনিস নয় যা কোন
ব্যক্তি বা দলের সঠিক পথের অনুসারী হবার নিশ্চিত আলামত হতে পারে। এর মাধ্যমে
একথা বুঝা যায় না যে, আল্লাহ তার প্রতি অনুগ্রহশীল এবং ভার নীতি ও আচরণ
আল্লাহর কাছে প্রিয়। অনুরূপভাবে কারোর গরীব ও দুর্দান্ত হওয়া একথা প্রমাণ করে
না যে, আল্লাহ তার ও তার নীতির প্রতি বিরূপ। আসল জিনিস হচ্ছে মানুষের ঈমান,
আল্লাহ ভীতি ও সততা। এরি ওপর তার আল্লাহর প্রিয় অপ্রিয় হওয়া নির্ভর করে।
একথাগুলো এজন্যে বলা হয়েছে যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের দাওয়াতের
মোকাবিলায় সে সময় যে প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি হচ্ছিল তার সকল নায়কই ছিন মক্কার বড়
বড় নেতা ও সরদার। তারা নিজেরাও এ আত্মস্তরিতায় ভুগছিল এবং তাদের প্রভাবাধীন
লোকেরাও এ ভুল ধারণার শিকার হয়েছিল যে, যাদের প্রতি আল্লাহর অনুগ্রহ ধারা বর্ষিত
হচ্ছে এবং যারা একনাগাড়ে সামনের দিকে এগিয়েই চলছে তাদের ওপর নিশ্চয়ই আল্লাহ
ও দেবতাদের নেক নজর রয়েছে। আর এ বিধ্বস্ত বিপর্যস্ত লোকেরা যারা মুহাম্মাদের
(সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সাথে আছে এদের নিজেদের অবস্থাই তো একথা প্রমাণ
করছে যে, আল্লাহ এদের সাথে নেই এবং দেবতাদের কোপ তো এদের ওপর পড়েই
আছে।
এরপর মকাবাসীদেরকে বিভিন্ন দিক দিয়ে নবী সান্াল্লাহ আলাইহি ওয়া সাল্লামের
নবুওয়াতের ওপর বিশ্বাসী করার চেষ্টা করা হয়েছে। তাদেরকে জানানো হয়েছে,
তোমাদের ওপর এই যে দুর্তিক্ষ নাযিল হয়েছে এটা একটা সতর্ক বাণী। এ দেখে তোমরা
নিজেরা সংশোধিত হয়ে যাও এবং সরল সঠিক পথে এসে যাও, এটাই তোমাদের জন্য
ভালো। নয়তো! এরপর আসবে আরো কঠিন শাস্তি, যা দেখে ভোমরা আর্তনাদ করতে
থাকবে।
তারপর বিশ্ব-জাহানেও তাদের নিজেদের সন্তার মধ্যে যেসব নিদর্শন রয়েছে সেদিকে
তাদের দৃষ্টি নতুন করে আকৃষ্ট করা হয়েছে। মূল বক্তব্য হচ্ছে, চোখ মেলে দেখো। এই
নবী যে তাগহীদ ও পরকালীন জীবনের তাৎপর্য ও স্বরূপ তোমাদের জানাচ্ছেন চারদিকে
কি তার সাক্ষদানকারী নিদর্শনাবলী ছড়িয়ে নেই? তোমাদের বুদ্ধি ও প্রকৃতি কি তার
সত্যতা ও নিরূলতার সাক্ষ দিচ্ছে না?
এরপর নবী সান্ন্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে এ মর্মে নির্দেশ দেয়া হয়েছে যে, তারা
তোমার সাথে যাই ব্যবহার করে থাকুক না কেন তুমি ভালোভাবে তাদের প্রত্যত্তর দাও।
শয়তান যেন কখনো তোমাকে আবেগ উচ্ছল করে দিয়ে মন্দের জবাবে মন্দ করতে উদ্দ্ধ
করার সুযোগ না পায়।
বক্তব্য শেষে সত্য বিরোধীদেরকে আখেরাতে জবাবদিহির ভয় দেখানো হয়েছে।
তাদেরকে এ মর্মে সতর্ক করে দেয়া হয়েছে যে, তোমরা সত্যের আহবায়ক ও তাঁর
অনুসারীদের সাথে যা করছো সেজন্য তোমাদের কঠোর জবাবদিহি সন্থৃধীন হতে হবে।
সুরা আন নুর বিষয়বস্তু ও কেন্ত্রীক্স বিষয়
এ ছি সে সময়কার পরিস্থিতি। এর মধ্যে প্রথম হামলার সময় সূরা আহ্যাবের শেষ
টি রুকৃ’ নাধিণ হয় এবং ঘিতীয় হামলার সময় নাধিল হয় সূরা নূর। এ পাভূমি সামনে
রেখে এ দু’টি সূরা পর্যায়ক্রমে অধ্যয়ন করলে এ বিধানগুলোর মধ্যে যে জ্ঞান ও প্রক্জা
নিহিত রয়েছে তা তাদোডাবে অনুধাবন করা যায়।
মুনাফিকরা মুসঘমানদেরকে এমন এক ময়দানে পরাজিত করতে চাচ্ছি যেটা ছিন
তাদের প্রাধান্যের আসল ক্ষেত্র। আল্লাহ তাদের চরিত্র হননমূণক অপবাদ রটনার
অভিযানের বিরুদ্ধে একটি কুদ্ধ ভাষণ দেবার বা মু্সনমানদেরকে পান্টা আক্রমণে উদ
করার পরিবর্তে মুসলমানদেরকে এ শিক্ষা দেবার প্রতি তাঁর সার্বিক দৃষ্টি নিবদ্ধ করেন যে,
তোমাদের নৈতিক অংগনে” যেখানে যেখানে শূন্যতা রয়েছে সেগুণো পূর্ণ কর এবং এ
অংগনকে আরো বেশী শক্তিশাী করো। একটু আগেই দেখা গেছে যয়নবের (রা) বিয়ের
সময় মুনাফিক ও কাফেররা কী হাংগামাটাই না সৃষ্টি করেছিল। অথচ সূরা আহ্যাব বের
করে পড়লে দেখা যাবে সেখানে ঠিক সে হাংগামার যুগেই সামাজিক সংস্কার সম্পর্কিত
নিম্নধিখিত নির্দেশগুণো দেয়া হয় ৪
এক £ নবী করীমের (সা) পবিত্র স্রীগণকে হকুম দেয়া হয় নিজেদের গৃহমধ্যে
মর্যাদা সহকারে বসে থাকো, সাজসং্জা করে বাইরে বের হয়ো না এবং ভিন পুরুষদের
সাথে কথা বলার প্রয়োজন হলে বিনম্র স্বরে কথা বলো না, যাতে কোন ব্যক্তি কোন
অবাঞ্ছিত আশা পোষণ না করে বসে! (৩২ ও ৩৩ আয়াত)
দুই বীরদের সা) পে বরের বিনা নুতিতেপবশ বন্ধ করে দেয়া
হয় এবং নির্দেশ দেয়া হয়, পবিত্র স্ত্রীদের কাছে কিছু চাইতে হলে পরদার জাড়াম
থেকে চাইতে হবে। (৫৩ আয়াত)
তিন £ গায়ের মাহরাম পুরুষ ও মাহুরাম আত্মীয়দের মধ্যে পার্থক্য সৃষ্টি করা হয়েছে
এবং হকুম দেয়া হয়েছে নবীর (সা) পবিত্র স্ত্রীদের কেবলমাত্র মাহরাম আত্রীয়রাই
স্বাধীনভাবে তাঁর গৃহে যাতায়াত করতে পারবেন। (৫৫ আয়াত)
চার £ সুসণমানদেরকে বণে দেয়া হয়, নবীর শ্রীগণ তোমাদের মা এবং একজন
মুসণমানের জন্য তাঁরা চিরতরে ঠিক তার আপন মায়ের মতই হারাম। তাই তদের সম্পর্কে
প্রত্যেক মুসলমানের নিয়ত একদম পাক পবিত্র থাকতে হবে! (৫৩ ও ৫৪ আয়াত)
পাচ £ মুসলমানদেরকে এ মর্মে সতর্ক করে দেয়া হয়েছে যে, নবীকে কষ্ট দেয়া
ুনিয়ায়. ও আখেরাতে আল্লাহর লানত ও লাঞ্কুনাকর আযাবের কারণ হবে এবং এভাবে
কোন মুসলমানের ইজ্জতের ওপর আক্রমণ করা এবং তার ভিত্তিতে তার ওপর অযথা
দোষারোপ করাও কঠিন গোনাহের শামিল। (৫৭ ও ৫৮ আয়াত)
ছয় £ সকল মুসলমান মেয়েকে হুকুম দেয়া হয়েছে, যখনই বাইরে বের হবার প্রয়োজন
হবে, চাদর দিয়ে নিজেকে ভালোভাবে ঢেকে এবং ঘোমটা টেনে বের হতে হবে। (৫৯
আয়াত)
তারপর যখন হ্যরত আয়েশার (রা) বিরুদ্ধে মিথ্যা অপবাদের ঘটনায় মদীনার সমাজে
একটি, হাংগামা সৃষ্টি হয়ে যায় তখন নৈতিকতা, সামাজিকতা ও আইনের এমন সব
বিধান ও নির্দেশসহকারে সূরা নূর নাধিল করা হয় যার উদ্দেশ্য ছিল প্রথমত মুসলিম
সমাজকে অনাচারের উৎপাদন ও তার বিস্তার থেকে সংরক্ষিত রাখতে হবে এবং যদি তা
উৎপর হয়েই যায় তাহলে তার যথাযথ প্রতিকার ও প্রতিরোধ এবং সংশোধনের ব্যবস্থা
করতে হবে। এ সূরায় এ বিধান ও নির্দেশগুলো যে ধারাবাহিকতা সহকারে নাধিল হয়েছে
এখানে আমি সেভাবেই তাদের সংক্ষিপতসার সন্নিবেশ করছি। এ দ্বারা কুরআন যথার্থ
মনসতাত্বিক পরিস্থিতিতে মানুষের জীবনের সংশোধন ও সংগঠনের জন্য কি ধরনের
আইনগত, নৈতিক ও সামাজিক ব্যবস্থা ও কৌশল অবল্ন করার বিধান দেয়, তা পাঠক
অনুমান করতে পারবেন £
0) যিনা, ইতিপূর্বে যাকে সামাজিক অপরাধ গণ্য করা হয়েছিল (সূরা নিসা ৪ ১৫ ও
১৬ আয়াত) এখন তাকে ফৌজদারী অপরাধ গণ্য করে তার শাস্তি হিসেবে একশত
বেত্রাঘাত নির্ধারণ করা হয়।
(২) ব্যত্চারী পুরুষ ও নারীকে সামাজিকভাবে বয়কট করার হুকুম দেয়া হয় এবং
তাদের সাথে বৈবাহিক সম্পর্ক স্থাপন করতে মু”মিনদেরকে নিষেধ করা হয়।
৩) যে ব্যক্তি অন্যের ওপর যিনার অপবাদ দেয় এবং তারপর প্রমাণস্বরূপ সাক্ষী পেশ
করতে পারে না তার শান্তি হিসেবে ৮০ ঘা বেত্রাঘাত নির্ধারণ করা হয়।
(8) স্বামী যদি স্ত্রীর বিরুদ্ধে অপবাদ দেয় তাহলে তার জন্য “লি”আন*-এর রীতি
বর্তন করা হয়।
(৫) হযরত আয়েশার (রা) বিরুদ্ধে মুনাফিকদের মিথ্যা অপবাদ খণ্ডন করে এ নির্দেশ |
দেয়া হয় যে, যে কোন ভদ্র মহিলা বা ভদ্র লোকের বিরুদ্ধে যে কোন অপবাদ দেয়া হোক,
তা চোখবুজে মেনে নিয়ো না এবং তা ছড়াতেও থেকো না। এ ধরনের গুজব যদি রটে
যতে থাকে তাহলে মুখে মুখে তাকে ছড়িয়ে পড়তে সাহায্য না করে তাকে দাবিয়ে দেয়া
বং তার পথ রোধ করা উচিত। এ প্রসংগে লীতিগতভাবে একটি কথা বুঝিয়ে দেয়া
য়েছে যে, পৰিত্র-পরিচ্ছ ব্যক্তির পবিত্র-পরিচ্ছ নারীর সাথেই বিবাহিত হওয়া উচিত।
ষ্টা ও ষ্টা নারীর আচার-আচরণের সাথে সে দু’দিনও খাপ খাইয়ে চলতে পারবে না।
বিত্র-পরিচ্ছর নারীর ব্যাপারেও একই কথা। তার আত্মা পবিত্র-পরিচ্ছর পুরুষের সাথেই
[প খাওয়াতে পারে, নষ্ট ও অষ্ট পুরুষের সাথে নয়। এখন যদি তোমরা রসূলকে (সা)
কজন পবিত্র বরং পবিভ্রতম ব্যক্তি বলে জেনে থাকো তাহলে কেমন করে একথা
তামাদের বোধগম্য. হলো যে, একজন ত্রষ্টা নারী তার প্রিয়তম জীবন সঙ্গিনী হতে
রতো? যে নারী কার্যত ব্যভিচারে পর্যন্ত িপ্ত হয়ে যায় তার সাধারণ চালচনন
এমন পর্যায়ের হতে পারে যে, রসৃণের মতো পবিত্র ব্যক্তিত্ব তার সাথে এতাবে নাস
জীবন যাপন করেন। কাজেই একজন নীচ ও স্থার্থা্থ নোক একটি বাজে অপবাদ কারোর
ঘাড়ে চাপিয়ে দিলেই তা’ গ্রহণযোগ্য তো হয়ই না, উপরন্তু তার প্রতি মনোযোগ দেয়া এবং
তাকে সম্ভব মনে করাও উচিত নয়। আগে চোখ মেণে দেখতে হবে। অপবাদ কে
লাগাচ্ছে এবং কার প্রতি লাগাচ্ছে? ,
(ডে) যারা জাজেবাজে খবর ও খারাপ গুজব রটায় এবং মুসলিম সমাজে নৈতিকতা
বিরোধী ও অগ্রীল কার্যকলাপের প্রচণন করার প্রচেষ্টা চালায় তাদের ব্যাপারে বলা হয় যে,
তাদেরকে উৎসাহিত করা যাবে না বরং তারা শাস্তি লাতের যোগ্য।
(৭) মুসনিম সমাছ্ে পারস্পরিক সুধারণার ভিত্তিতে সামানরিক সম্পর্কের ভিত্ গড়ে
উঠতে হবে, এটিকে একটি সাধারণ নিয়ম হিসেবে নিদিষ্ট করে দেয়া হয়। যতচ্ছণ পর্যন্ত
পাপ করার ‘কোন প্রমাণ পাওয়া যাবে ‘দা ততক্ষণ প্রত্যেক ব্যক্তিকে নির্দোষ ও নিরপরাধ
মনে করতে হবে। প্রত্যেক ব্যক্তির নির্দোষ হবার প্রমাণ না পাওয়া পর্যন্ত তাকে দোষী মনে
করতে হবে, এটা ঠিক নয়।
(৮) নোকদেরকে সাধারণভাবে নির্দেশ দেয়া হয় যে, একজন অন্যজনের গৃহে
নিসংকোচে প্রবেশ করো না বরৎ অনুমতি নিয়ে প্রবেশ করো।
(১) নারী ও পুরুষদেরকে দৃষ্টি নিয্িত করার নির্দেশ দেয়া হয়। পরস্পরের দিকে চোখ
ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে দেখতে ও উকিঝুঁকি মারতে এবং আড়চোখে দেখতে নিষেধ করা হয়!
(১০) মেয়েদের হুকুম দেয়া হয়,’নিজেদের গৃহে মাথা ও বুক ঢেকে রাখো।
(১১) মেয়েদের নিজেদের মাহ্রাম আত্তীয় ও গৃহপরিচারকদের ছাড়া আর কারোর
সামনে সাজগোজ করে না আসার হুকুম দেয়া হয়
(১২) তাদেরকে এ হুকুম দেয়া হয় যে, বাইরে বের হণে শুধু যে ফেব নিজেদের
সাজসজ্জা নৃকিয়ে বের হবে তাই না বরং এমন অপংকার পরিধান করেও বাইরে বের
হওয়া যাবে না যেগুলো বাজতে থাকে।
(১৩) সমাজে মেয়েদের ও পুরুষদের বিয়ে না করে আইবুড়ো ও আইবুড়ী হয়ে বসে
থাকাকে অপছন্দ করা হয়। হুকুম দেয়া হয়, অবিবাহিতদের বিয়ে দেয়: হোক। এমনকি
বাদী ও গোদামদেরকেও অবিবাহিত রেখে দেয়া যাবে না। কারণ কৌমাধ ও কুমারিত্ব
|| অশ্লীনতা ও চারিত্রিক অনাচারের প্ররোচনাও দেয়, আবার মানুষকে অশ্লীণতার সহজ
| শিকারে পরিণত করে। অবিবাহিত ব্যক্তি আর কিছু না হলেও খারাপ খবর শোনার এবং
|| তা ছড়াবার ব্যাপারে আগ্রহ নিতে থাকে
ূ (8) বাঁদী ও গোলাম স্বাধীন করার জন্য “্মুকাতাব’-এর পথ বের করা হয়।
| সুক্িপণ দিয়ে স্বাধীন হওয়া মালিকরা ছাড়া জন্যদেরকেও মুকাভাব বাদী ও
|| গোলামনেরকে আর্থিক সাহায্য করার হুকুম দেয়া হয়।
0৫) বাদীদের্ক অর্থোপার্জনের- কাজে খাটানো নিষিদ্ধ করা হয়। আরবে বাঁদীদের
মাধ্যমেই এ পেশাটি জিইয়ে রাখার রেওয়াজ ছিল। এ কারণে একে নিষিদ্ধ করার ফলে
1 আসলে পতিতাবৃত্তি আইনগতভাবে নিষিদ্ধ হয়ে যায়! ।
বাকী আছে——
তাফহীমুল কুরআনের ভূমিকা নোট ১০ম খন্ড – সুরা ফুরকান, শুয়ারা, নামল, কাসাস
সুরা ফুরকান -বিষয্সবন্তু ও কেন্দ্রীয় আলোচ্য বিষক্স
কুরআন, মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নবুওয়াত এবং তাঁর পেশকৃত
(শিক্ষার বিরুদ্ধে মক্কার কাফেরদের পক্ষ থেকে যেসব সন্দেহ ও আপত্তি উথাপন করা
(হতো সেগুলো সম্পর্কে এখানে আলোচনা করা হয়েছে। এর প্রত্যেকটি যথাযথ জবাব
দেয়া হয়েছে এবং সাথে–লাথে সত্যের দাওয়াত থেকে মুখ ফিরিয়ে নেবার খারাপ
পরিণামও পরিষ্কারভাবে বর্ণনা করা হয়েছে! শেষে সুরা. যু’মিনূনের মতো মু’মিনদের
নৈতিক গুণাবলীর একটি নকশা তৈরি করে সেই মানদণ্ডে যাচাই করে খাঁটি ও ভেজাল
নির্ণয় করার জন্য সাধারণ মানুষের সামনে রেখে দেয়া হয়েছে। একদিকে রয়েছে এমন
চরিত্র সম্পন্ন লোকেরা যারা এ পর্যন্ত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের শিক্ষার
মাধ্যমে তৈরি হয়েছে এবং আগামীতে যাদেরকে তৈরি করার প্রচেষ্টা চলছে। অন্যদিকে
রয়েছে এমন নৈতিক আদর্শ যা সাধারণ আরববাসীদের মধ্যে পাওয়া যায় এবং যাকে
অক্ষুণ্ন রাখার জন্য জাহেলিয়াতের পতাকাবাহীরা সর্বাত্বক প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। এখন
আরববাসীরা এ দুটি আদর্শের মধ্যে কোন্টি পছন্দ করবে তার ফায়সালা তাদের
নিজেদেরকেই করতে হবে। এটি ছিল একটি নিরব প্রশ্ন। আরবের প্রত্যেকটি অধিবাসীর
সামনে এ প্রশ্ন রেখে দেয়া হয়। খাত্র কয়েক বছরের মধ্যে একটি ক্ষুদ্রতম সংখ্যালঘু গোষ্ঠী
ছাড়া বাকি সমথ জাতি এর যে জবাব দেয় ইতিহাসের পাতায় তা অন্লান হয়ে আছে।
সুরা শুয়ারা – বিষয়বন্তু ও আলোচ্য বিষয়
ভাষণের পটভূমি হচ্ছে, মন্ধার কাফেররা লাগাতার অস্বীকার ও প্রত্যাখ্যানের মাধ্যমে !
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের দাওয়াত ও তাবলীগের মোকাবিলা করছিল। এ
জন্য তারা বিভিন্ন রকমের বাহানাবাজীর আশ্রয় নিচ্ছিল। কখনো বলতো, তুমি তো
আমাদের কোন চিহ্ন দেখালে না, তাহলে আমরা কেমন করে তোমাকে নবী বলে মেনে
নেবো। কখনো তাকে কবি ও গণক আখ্যা দিয়ে তাঁর শিক্ষা ও উপদেশাবলীকে কথার
মারপ্যাচে উড়িয়ে দেবার চেষ্টা করতো। আবার কখনো তার মিশনকে হালকা ও
গুরুত্বহীন করে দেবার জন্য বলতো, কয়েকজন মূর্খ ও অর্বাচীন যুবক অথবা সমাজের
নিম্ন শ্রেণীর লোক তাঁর অনুসারী হয়েছে, অথচ এ শিক্ষা যদি তেমন প্রেরণাদায়ক ও
প্রাণ্রবাহে পূর্ণ হতো তাহলে জাতির শ্রেষ্ঠ লোকেরা, পত্তিত, জ্ঞানী-গুণী ও সরদাররা
একে গ্রহণ করে নিতো। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাদেরকে বলিষ্ঠ যুক্তি
সহকারে তাদের আকীদা-বিশ্বাসের ভান্তি এবং তাওহীদ ও আখেরাতের সত্যতা বুঝাবার
চেষ্টা করতে করতে ক্লান্ত হয়ে পড়ছিলেন। কিন্তু তারা. হঠকারিতার নিত্য নতুন পথ
অবলব্ন করতে কখনোই ক্লান্ত হতো না। এ জিনিসটি রসূলুল্লাহ্র (সা) জন্য অসহ্য
মর্মযাতনার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছিল এবং এ দুঃখে তিনি চরম মানসিক পীড়ন অনুভব
করছিলেন। |
এহেন অবস্থায় এ সূরাটি নাধিল হয়। বক্তব্যের সৃচনা এভাবে হয় ৫ তুমি এদের জন্য
ভাবতে ভাবতে নিজের প্রাণ শক্তি ধ্বংস করে দিচ্ছো কেন? এরা কোন নিদর্শন দেখেনি,
এটাই এদের ঈমান না আনার কারণ নয়। বরং এর কারণ হচ্ছে, এরা একগুয়ে ও
হঠকারী। এরা বুঝালেও বুঝে না। এরা এমন কোন নিদর্শনের প্রত্যাশী, যা জোরপূর্বক
এদের মাথা নুইয়ে দেবে। আর এ নিদর্শন যথাসময়ে যখন এসে যাবে তখন তারা নিজেরাই
জানতে পারবে, যে কথা তাদেরকে বুঝানো হচ্ছিল তা একেবারেই সঠিক ও সত্য ছিন। এ
ভূমিকার পর দশ রুকু” পর্যস্ত ধারাবাহিকভাবে যে বিষয়বস্তুটি বর্ণিত হয়েছে তা হচ্ছে এই
যে, সত্য প্রত্যাশীদের জন্য আল্লাহর দুনিয়ায় সবত্র নিদর্শন ছড়িয়ে রয়েছে। সেগুলো দেখে
তারা সত্যকে চিনতে পারে। কিন্তু হঠকারীরা কখনো বিশ্ব-জগতের নিদর্শনাদি এবং
নবীদের মুজিযাসমূহ তথা কোন জিনিস দেখেও ঈমান আনেনি। যতক্ষণ না আল্লাহর
আযাব এসে ভাদরেকে পাকড়াও করেছে ততক্ষণ পর্যন্ত তারা নিজেদের গোমরাহীর ওপর
অবিচল থেকেছে। এ সহদ্ধের প্রেক্ষিতে এখানে ইতিহাসের সাতটি জাতির অবস্থা পেশ
করা হয়েছে। মন্তার কাফেররা এ সময় যে হঠকারী নীতি অবল্ন করে চলছিল
ইতিহাসের এ সাতটি জাতিও সেকালে সেই একই নীতির আশ্রয় নিয়েছিল। এ
এ্রতিহাসিক্জ বর্ণনার আওতাধীনে কতিপয় কথা মানস পটে অংকিত করে দেয়া হয়েছে।
এক £ নিদর্শন দু’ ধরনের। এক ধরনের নিদর্শন আল্লাহর যমীনে চারদিকে ছড়িয়ে
রয়েছে। সেগুলো দেখে প্রত্যেক বুদ্ধিমান ব্যক্তি নবী যে জিনিসের দিকে আহবান জানাচ্ছেন
সেটি সত্য হতে পারে কিনা সে সম্পর্কে অনুসন্ধান ও গবেষণা করতে পারে। দ্বিতীয়
ধরনের নিদর্শন ফেরাউন ও তার সম্পদায় দেখেছে, নৃহের সম্প্রদায় দেখেছে, আদ ও
সামূদ দেখেছে, লূতের সম্প্রদায় ও আইকাবাসীরাও দেখেছে। এখন কাফেররা কোন্
ধরনের নিদর্শন দেখতে চায় এটা তাদের নিজেদের সিদ্ধান্তের ব্যাপার।
দুই £ সকল যুগে কাফেরদের মনোভাব একই রকম ছিল। তাদের যুক্তি ছিল একই
প্রকার। তাদের আপত্তি ছিল একই। ঈমান না আনার জন্য তারা একই বাহানাবাজীর আশ্রয়
নিয়েছে। শেষ পর্যন্ত তারা একই পরিণতির সম্মুখীন হয়েছে। অন্যদিকে প্রত্যেক যুগে
প্রত্যেক নবীর শিক্ষা একই ছিল। তাদের চরিত্র ও জীবননীতি একই রঙে রঞ্জিত ছিল।
নিজেদের বিরোধীদের মোকাবিলায় তাঁদের যুক্তি-প্রমাণের ধরন ছিল একই। আর তাঁদের
সবার সাথে আল্লাহর রহমতও ছিল একই ধরনের। এ দুটি আদর্শের উপস্থিতি ইতিহাসের
পাতায় রয়েছে। কাফেররা নিজেরাই দেখতে পারে তাদের নিজেদের কোন্ ধরনের ছবি
পাওয়া যায় এবং মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ব্যক্তিসত্তায় কোন্ ধরনের
আদর্শের নিদর্শন পাওয়া যায়।
তৃতীয় যে কথাটির বারবার পুনরাবৃত্তি করা হয়েছে সেটি হচ্ছে আল্লাহ একদিকে যেমন
অজেয় শক্তি, পরাক্রম ও ক্ষমতার অধিকারী অপরদিকে তেমনি পরম করাময়ও।
ইতিহাসে একদিকে রয়েছে তাঁর ক্রোধের দৃষ্টান্ত এবং অন্যদিকে রহমতেরও। এখন
লোকদের নিজেদেরকেই এ সিদ্ধান্ত নিতে হবে যে, তারা নিজেদের তাঁর রহমতের যোগ্য
বানাবে না ক্রোধের।
শেষ রুকুতে এ আলোচনাটির উপসংহার টানতে গিয়ে বলা হয়েছে, তোমরা যদি
নিদর্শনই দেখতে চাও, তাহলে ধ্বংসপ্রাপ্ত জাতিগুলো যেসব ভয়াবহ নিদর্শন দেখেছিল
সেগুলো দেখতে চাও কেন? এ কুরআনকে দেখো। এটি তোমাদের নিজেদের ভাষায়
রয়েছে। মুহাম্মাদ সাললান্রাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে দেখো। তাঁর সাথীদেরকে দেখো।
এটি কি কোন শয়তান বা জিনের বাণী হতে পারে? এ বাণীর উপস্থাপককে কি তোমাদের
গণৎকার বলে মনে হচ্ছে? মুহাম্মাদ ও তাঁর সাথীদেরকে কি তোমরা কবি ও তাদের
সহযোগী ও সমমনারা যেমন হয় তেমনি ধরনের দেখেছো? জিদ ও হঠকারিতার কথা
আলাদা। কিন্তু নিজেদের অন্তরের অন্তস্থনে উকি দিয়ে দেখো সেখানে কি এর সমর্থন
পাওয়া যায়? যদি মনে মনে তোমরা নিজেরাই জানো গণকবৃত্তি ও কাব্চর্চার সাথে তীর
দূরতম কোন সম্পর্ক নেই, তাহলে এই সাথে একথাও জেনে নাও, তোমরা ভুলুম
করছো, কাজেই জালেমের পরিণামই তোমাদের ভোগ করতে হবে।
তাফহীমুল কুরআন সূচীপত্র ১১ তম খন্ড -সুরা আনকাবুত, রুম, লুকমান, সাজদাহ
সুরা আনকাবুত – বিষযসবন্তু ও কেন্দ্রীয় বক্তব্য
সৃরাটি পড়লে মনে হবে এটি যখন নাযিল হচ্ছিল তখন মক্কায় মুসলমানরা মহা
বিপদ-মুসিবতের মধ্যে অবস্থান করছিল। কাফেরদের পক্ষ থেকে পূর্ণ শক্তিতে চলছিল
ইসলামের বিরোধিতা এবং মুমিনদের ওপর চালানো হচ্ছিল কঠোর জুলুম-নিপীড়ন।
এহেন অবস্থায় মহান আল্লাহ একদিকে সাচ্চা ঈমানদারদের মধ্যে সংকল্পের দৃঢ়তা,
সাহস ও অবিচলতা সৃষ্টি করার এবং অন্যদিকে দুর্বল ঈমানদারদেরকে লজ্জা দেবার জন্য
3১
এ মৃরাটি নাযিল করেন। এই সাথে এর মধ্যে মককার কাফেরদেরকেও এ মর্ষে কঠোর
ভীতি প্রদর্শন করা হয়েছে যে, নিজেদের জন্য এমন পরিণতি ডেকে এনো না সত্যের সাথে
শত্রুতা পোষণকারীরা প্রতি যুগে যার সম্মুখীন হয়ে এসেছে।
সে সময় কিছু কিছু যুবক যেসব প্রশ্নের সম্মুবীন হচ্ছিলেন এ প্রসংগে তারও জবাব
দেয়া হয়েছে। যেমন তাঁদের পিতা-মাতারা তাঁদের ওপর মুহান্মাদ সান্ান্লাহ আলাইহি
ওয়া সাল্লামের দীন ত্যাগ করে তাদের দীনের ওপর প্রতিষ্ঠিত থাকার জন্য চাপ প্রয়োগ
করতো। তাঁদের পিতা-মাতার বলতো, যে কুরআনের প্রতি তোমরা ঈমান এনেছো
তাতেও তো একথাই লেখা আছে যে, মা-বাপের হক সবচেয়ে বেশী। কাজেই আমরা
যাকিছু বলছি ভাই তোমরা মেনে নাও। নয়তো তোমরা নিজেদের ঈমান বিরোধী কাজে
লিপ্ত হবে। ৮ আয়াতে এর জবাব দেয়া হয়েছে
অনুরূপভাবে কোন কোন নওমুসলিমকে তাদের গোত্রের লোকেরা বলতো, তোমরা
আমাদের কথা মেনে নাও এবং এ ব্যক্তি থেকে আলাদা হয়ে যাও, এ জন্য
আযাব-সওয়াব যাই হোক, তার দায়িত্ব আমরা গ্রহণ করছি। যদি এ জন্য আল্লাহ
তোমাদের পাকড়াও করেন তাহলে আমরা অবরী হয়ে বলে দেবো £ জনাব, এ
বেচারাদের কোন দোষ নেই। আমরাই এদেরকে ঈমান ত্যাগ করতে বাধ্য করেছিলাম।
কাজেই আমাদের পাকড়াও করুন। এর জবাব দেয়া হয়েছে ১২-১৩ আয়াতে
এ সূরায় যে কাহিনীগুলো বর্ণনা করা হয়েছে সেখানেও বেশীরভাগ ক্ষেত্রে এ দিকটিই
সুস্পষ্ট করা হয়েছে যে, পূর্ববর্তী নবীদেরকে দেখো, ভারা কেমন কঠিন বিপদের সমমবীন
হয়েছেন। কত দীর্ঘকাল ধরে তাঁরা নির্যাতিত হয়েছেন। ভারপর আল্লাহর পক্ষ থেকে
তাদেরকে সাহায্য করা হয়েছে। কাজেই ভায় পেয়ো না। আল্লাহর সাহায্য নিশ্চয়ই আসবে
(কিনতু পরীক্ষার একটি সময়-কাল অতিবাহিত হওয়া অবশ্যই গ্রয়োজন। মুসলমানদেরকে
এ শিক্ষা দেবার সাথে সাথে মকার কাফেরদেরকেও এ কাহিনীগুলোতে সতর্ক করে দেয়া
হয়েছে যে, যদি আল্লাহর পক্ষ থেকে পাকড়াও হতে দেরী হয়, তাহনে তাতে আর
কোনদিন পাকড়াও হবেই না বলে মনে করে নিয়ো না। অতীতের ‘ ধ্বংসপ্রাপ্ত জাতিগুসোর
চিহ্ন ও ধ্বংসাবশেষ তোমাদের সামনে রয়েছে। দেখে নাও, শেষ পর্যন্ত তাদের সর্বনাশ
হয়েই গেছে এবং আল্লাহ তার নবীদেরকে সাহায্য করেছেন।
তারপর মুসলমানদের এভাবে পথনির্দেশনা দেয়া হয়েছে যে, জুঙ্গুম-নির্যাতন যদি
তোমাদের সহ্যের সীমা ছাড়িয়ে যায়, ভাহলে ঈমান পরিত্যাগ করার পরিবর্তে তোমরা
ঘরবাড়ি ত্যাগ করে বের হয়ে যাও। আল্লাহর যমীন অনেক প্রশত্ত। যেখানে আল্লাহ্র
বন্দেগী করার সুযোগ আছে সেখানে চলে যাও!
এসব কথার সাথে সাথে কাফেরদেরকে বুঝাবার দিকটিও বাদ দেয়া হয়নি। তাওহীদ
ও আখেরাত উভয় সত্যকে যুক্তিসহকারে তাদেরকে বুঝাবার চেষ্টা করা হয়েছে শিরুককে
খণ্ডন করা হয়েছে। বিশ্ব-জাহানের নিদর্শনাবলীর প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করে তাদেরকে
জানানো হয়েছে যে, আমার নবী তোমাদের সামনে যে শিক্ষা পেশ করছেন এ শিদর্শনাবলী ||
তার সত্যতা প্রমাণ করছে।
সুরা রুম – বিষয়নত্তু ও সুক্স বক্তব্য
এ সূরায় বক্তব্য এভাবে শুর করা হয়েছে, আজ রোমানরা পরাজিত হয়েছে এবং
সমগ্র বিশ্ববাসী মনে করছে এ সাম়াজোর পতন আসন্ন। কিন্তু কয়েক বছর অতিবাহিত
হতে না হতেই সবকিছুর পরিবর্তন হয়ে যাবে এবং আজ যে পরাঞ্ত সেদিন সে বিজয়ী
হয়ে যাবে।
এ ভূমিকা থেকে একথা প্রকাশিত হয়েছে যে, মানুষ নিজের বাহ্য দৃষ্টির কারণে
শুধুমাত্র তাই দেখে যা তার চোখের সামনে থাকে। কিন্তু এ বাহ্যিক পর্দার পেছনে যা কিছু
আছে সে সম্পর্কে সে কিছুই জানে না। এ বাহ্যদৃষ্টি যখন দুনিয়ার সামান্য সামান্য ব্যাপারে
বিশ্রান্তি ও ভ্রান্ত অনুমানের কারণ হয়ে দাঁড়ায় এবং যখন শুধুমাত্র স্আগামীকাল কি হবে”
এতটুকু কথা না জানার কারণে মানুষ ডুল হিসেব করে বসে তখন সামগ্্িকভাবে সমগ্র
জীবনের ব্যাপারে ইহকালীন বাহ্যিক জীবনের ওপর নির্ভরশীলতা এবং এরি ভিত্তিতে
নিজের সমগ্র জীবন পুঁজিকে বাজী রাখা মন্ত বড় ভূল, তাতে সন্দেহ নেই।
এভাবে রোম ও ইরানের বিষয় থেকে ভাষণ আখেরাতের বিষয়ের দিকে মোড় নিয়েছে
এবং ক্রমাগত তিন রুকৃ পর্যন্ত বিভিন্নভাবে একথা বুঝারার চেষ্টা করা হয়েছে যে,
আখেরাতের জীবন সম্ভব, যুক্তিসংগত এবং এর প্রয়োজনও আছে। মানুষের জীবন
ব্যবস্থাকে সুস্থ ও সুন্দর করে রাখার স্বার্থেও তার জন্য আখেরাতে বিশ্বাস করে বর্তমান
জীবনের কর্মসূচী নেয়া প্রয়োজন। অন্যথায় বাহ্যদৃষ্ঠির ওপর নির্ভর করে কর্মসূচী গ্রহণ
করার যে পরিণাম হয়ে থাকে তাই হতে বাধ্য।
এ প্রসংগে আখেরাতের পক্ষে যুক্তি পেশ করতে গিয়ে বিশ্ব-জগতের যেসব নিদর্শনকে
সাক্ষ-প্রমাণ হিনেবে পেশ করা হয়েছে সেগুলো ভাওহীদেরও প্রমাণ পেশ করে। ভাই
চত্থ রুকু’র শুরু থেকে তাওহীদকে সত্য ও শিরককে খিথ্যা প্রমাণ করাই ভাষণের লক্ষ
হয়ে দীঁছায় এবং বলা হয়, মানুষের জন্য পুরোপুরি একনি হয়ে এক আল্লাহর বন্দেগী
করা ছাড়া আর কোন প্রাকৃতিক ধর্ম নেই। শির্ক বিশ্ব প্রকৃতি ও মানব প্রকৃতির বিরোধী।
তাই যেখানেই মানুষ এ ত্রষ্টতার পথ অবলযন করেছে সেখানেই বিপর্যয় সৃষ্টি হয়েছে। এ
সুযোগে আবার সেই মহা বিপর্যয়ের প্রতি ইর্গিত করা হয়েছে যা সে সময় দুনিয়ার দু’টি
সবচেয়ে বড় সাম্রাজ্যের মধ্যে যুদ্ধের কারণে সৃষ্টি হয়ে গিয়েছিল। বলা হয়েছে, এ বিপর্যয়ও
শির্কের অন্যতম ফল এবং মানব জাতির অতীত ইতিহাসে যতগুলো জাতি বিপর্যয়ের
মুখোমুখি হয়েছে তারা সবাই ছিল মুশরিক।
বক্তব্যের শেষ পর্যায়ে উপমার মাধ্যমে লোকদেরকে বুঝানো হয়েছে, যেমন মৃত পতিত
যমীন আল্লাহ প্রেরিত বৃষ্টির স্পর্শে সহসা জীবন্ত হয়ে ওঠে এবং ভীবন ও ফসলের ভাগার
উদ্গীরণ করতে থাকে, ঠিক তেমনি আল্লাহ ধ্েরিত অহী ও নবুগয়াতও মৃত পতিত
মানবতার পক্ষে রহমতের বারিধারা স্বরূপ এবং এর নাধিল হওয়া ভার জন্য জীবন, বৃদ্ধি,
বিকাশ এবং কল্যাণের উৎসের কারণ হয়। এ সৃযোগের সম্যবহার করলে আরবের এ
অনুর্বর ভূমি আল্লাহর রহমতে শস্ম শ্যামন হয়ে উঠবে এবং সমস্ত কল্যাণ হবে তোমাদের
জন্ম। আর এর সদ্বহার না করলে নিজেদেরই ক্ষতি করবে। তারপর
অনুশোচনা করেও কোন লাভ হবে না এবং ক্ষতিপূরণ করার কোন সুযোগই পাবে না।
তাফহিমুল কুরআন pdf download ১২ তম খন্ড – সুরা আহজাব, সাবা, ফাতির
বিষয়বন্তু ও মুল নক্তব্য
সূরা আহ্যাব নাধিল হবার সময় এ সমস্যাগুলোর উদ্ভব ঘটে এবং এখানে এগুলোই
আলোচিত হয়েছে।
এর বিষয়বস্তু সম্পর্কে চিন্তা-ভাবনা করলে এবং এর পটভূমি সামনে রাখলে পরিফার
জানা যায়, এ সমগ্র সূরাটি একটি ভাষণ নয়। একই সময় একই সংগে এটি নাধিল হয়নি।
বরং এটি বিভিন্ন বিধান ও ফরমান সম্বলিত। এগুলো সে সময়ের গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাবলী
প্রসঘগে একের পর এক নাধিল হয় তারপর সবগুলোকে একত্র করে একটি সূরার
আকারে বিন্যস্ত করা হয়। এর নিম্নলিখিত অংশগুলোর মধ্যে সুস্পষ্ট পার্থক্য দেখা যায়।
এক £ প্রথম রুকূঁ। আহ্যাব যুদ্ধের কিছু আগে নাধিল হয়েছে বলে মনে হয়।
ধ্রতিহাসিক পটভূমি সামনে রেখে এ রুকৃ’টি পড়লে পরিষ্কার অনুভূত হবে, এ অংশটি
নাধিল হবার আগেই হযরত যায়েদ (রা) হযরত যয়নবকে রো) ভালাক দিয়ে ফেলেছিলেন।
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দত্তক সম্পর্কিত জাহেলী যুগের ধারণা, কুসংস্কার ও
রসম-রেওয়াজ খতম করে দেবার প্রয়োজন অনুভব করছিলেন। তিনি এও অনুভব
করছিলেন যে, লোকেরা “পালক” সম্পর্কের ক্ষেত্রে ঘ্েফ আবেগের ভিত্তিতে যে ধরনের
স্পর্শকাতর ও কঠোর চিন্তাধারা পোষণ করে তা কোনক্রমেই খতম হয়ে যাবে না যতক্ষণ
না তিনি নিজে (অর্থাৎ নবী) অবর্তী হয়ে এ রেওয়াজটি খতম করে দেন। কিন্তু এ সত্ত্বেও
তিনি এ ব্যাপারেই বড় সন্দিহান ছিলেন এবং সামনে অথসর হতেও ইতস্তত করছিলেন।
কারণ যদি তিনি এ সময় হযরত যায়েদের তালাবপ্রাপ্ত স্ত্রীকে বিয়ে করেন তাহলে
ইসলামের বিরুদ্ধে হাংগামা সৃষ্টি করার জন্য পূর্বে যেসব মুনাফিক, ইহুদি ও মুশরিকরা
তৈরি হয়ে বসেছিল তারা এবার একটা বিরাট সুযোগ পেয়ে যাবে। এ সময় প্রথম রুকৃ’র
আয়াতগুলো নাযিল হয়?
| দুই £ দ্বিতীয় ও তৃতীয় রুকৃণতে আহযাব ও বনী কুরাইযার যুদ্ধ সম্পর্কে মন্তব্য করা
হয়েছে। এ দু’টি রুক্* যে সংশিষ্ট যুদ্ধ দু’টি হয়ে যাবার পর নাধিল হয়েছে এটি তার
সুস্পষ্ট প্রমাণ।
তিন ঃ চতুর্থ রুকু” থেকে শুরু করে ৩৫ আয়াত পর্যন্ত যে ভাষণ দেয়া হয়েছে তা দু’টি
বিষয়বস্তু সলিত। প্রথম অংশে আল্লাহ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের স্ত্রীগণকে
নোটিশ দিয়েছেন। এ অভাব অনটনের যুগে তারা বেসবর হয়ে পড়ছিলেন। তাঁদেরকে বলা
হয়েছে, তোমরা একদিকে দুনিয়া ও দুনিয়ার শোভা সৌন্দর্য এবং অন্যদিকে আল্লাহ, তাঁর
রসল ও আখেরাত এ দু’টির মধ্য থেকে যে কোন একটিকে বেছে নাও। যদি প্রথমটি
তোমাদের কার্থবখত হয় তাহলে পরিষ্কার বনে দাও। তোমাদেরকে একদিনের জন্যও এ
অনটনের মধ্যে রাখা হবে না বরং সানন্দে বিদায় করে দেয়া হবে। আর যদি দ্বিতীয়টি
তোমাদের পছন্দ হয়, তাহলে সবর সহকারে আল্লাহ ও তাঁর রসূলের সাথে সহযোগিতা
করো। পরবতী অংশগুনোতে এমন সামাজিক সংস্কারের দিকে অগ্রণী পদক্ষেপ নেয়া
হয়েছে যার প্রয়োজনীয়তা ইসলামী ছাঁচে ঢালাই করা মন-মগজের অধিকারী ব্যক্তিগণ
স্বত্র্তভাবেই অনুভব করতে শুরু করেছিলেন। এ প্রসংগে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লামের গৃহ থেকে সংস্কারের সূচনা করতে গিয়ে নবীর পবিত্র স্ত্রীগণকে হুকুম দেয়া
হয়েছে, তোমরা জাহেলী যুগের সাজসজ্জা পরিহার করো। আত্মমর্ধাদা নিয়ে গৃহে বসে
থাকো। বেগানা পুরুষদের সাথে কথা বলার ব্যাপারে কঠোর সতর্কতা অবনথন করো। এ
ছিল পর্দার বিধানের সৃচনা।
চার £ ৪৬ থেকে ৪৮ পর্যন্ত আয়াতের বিষয়বন্ধু হচ্ছে হযরত যয়নবের সাথে নবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের বিয়ে সম্পর্কিত। বিরোধীদের পক্ষ থেকে এ বিয়ের
ব্যাপারে যেসব আপত্তি উঠানো হচ্ছিল এখানে সেসবের জবাব দেয়া হয়েছে। মুসলমানদের
মনে যেসব সন্দেহ সৃষ্টি করার চেষ্টা করা হচ্ছিল সেগুলো সবই দূর করে দেয়া হয়েছে।
মুসলমানদেরকে নবীর (সা) মর্যাদা কি তা জানানো হয়েছে এবং খোদ নবীকে (সা)
কাফের ও মুনাফিকদের মিথ্যা প্রচারণার মুখে ধৈর্য ধারণ করার উপদেশ দেয়া হয়েছে।
পাঁচ ৪ ৪৯ আয়াতে তালাকের আইনের একটি ধারা বর্ণনা করা হয়েছে। এটি একটি
একক আয়াত। সম্ভবত এসব ঘটনাবলী প্রসংগে কোন সময় এটি নাধিল হয়ে থাকবে।
ছয় £ ৫০ থেকে &২ আয়াতে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের জন্য বিয়ের
বিশেষ বিধান বর্ণনা করা হয়েছে। সেখানে একথা সুস্পষ্ট করে দেয়া হয়েছে যে, দাম্পত্য
জীবনের ক্ষেত্রে সাধারণ মুসলমানদের ওপর যেসব বিধি-নিষেধ আরোপিত হয়েছে নবীর
(সা) ব্যাপারে তা প্রযোজ্য হবে না।
সাত £ ৫৩৫৫ আয়াতে সমাজ সংস্কারের ক্ষেত্রে দ্বিতীয় পদক্ষেপ উঠানো হয়েছে।
এগুলো নিম্নলিখিত বিধান সম্বলিত £
নবী সাল্লান্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের গৃহাত্যন্তরে বেগানা পুরুষদের যাওয়া আসার
ওপর বিধি-নিষেধ, সাক্ষাত করা ও দাওয়াত দেবার নিয়ম-কানুন, নবীর পবিত্র স্ত্রীগণ
সম্পর্কিত এ আইন যে, (কেবলমাত্র তাঁদের নিকটতম আত্মীয়রাই আসতে
পারেন, বেগানা পুরুষদের যদি কিছু বলতে হয় বা কোন জিনিস চাইতে হয় তাহলে পর্দার
আড়াল থেকে বলতে ও চাইতে হবে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের পবিত্র
স্ত্রীদের ব্যাপারে এ হুকুম যে, তাঁরা মুসলমানদের জন্যে নিজেদের মায়ের মতো হারাম
এবং নবীর (সা) পরও তাঁদের কারো সাথে কোন মুসলমানদের বিয়ে হতে পারে না।
আট ৪ ৫৬ থেকে ৫৭ আয়াতে নবী সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়া সাল্লামের বিয়ে ও তাঁর
পারিবারিক জীবনের বিরুদ্ধে যেসব কথাবার্তা বলা হচ্ছিল সেগুলো সম্পর্কে সতর্ক করে
দেয়া হয়েছে। এই সংগে মু’মিনদেরকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে, তারা যেন শত্রুদের পরনিন্দা
ও অন্যের ছিদ্রাবেষণ থেকে নিজেদের দূরে রাখে এবং নিজেদের নবীর ওপর দরূদ পাঠ
করে। এ ছাড়া এ উপদেশও দেয়া হয় যে, নবী তো অনেক বড় কথা, ঈমানদারদের তো
সাধারণ মুসলমানদের বিরুদ্ধেও অপবাদ দেয়া ও দোষারোপ করা থেকে দূরে থাকা
উচিত।
নয় £ ৫৯ আয়াতে সামাজিক সংস্কারের ক্ষেত্রে তৃতীয় পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। এতে
সম মুসলিম নারী সমাজের যখনই বাইরে বের হবার প্রয়োজন হবে চাদর দিয়ে
নিজেদেরকে ঢেকে এবং ঘোমটা টেনে বের হবার হুকুম দেয়া হয়েছে।
এরপর থেকে নিয়ে সূরার শেষ পর্যন্ত গুজব ছড়ানোর অভিযানের (%727:78
০) বিরুদ্ধে কঠোর নিন্দাবাদ ও ভীতি প্রদর্শন করা হয়েছে। মুনাফিক, অকাটমূর্খ ও
শিকৃষ্ট লোকেরা এ অভিযান চালাচ্ছিন।
তাফহিমুল কুরআন তাফসীর ১৩ খন্ড – সুরা ইয়াসিন, সাফফাত, সাদ, জুমার, মুমিন
সুরা ইয়াসিন – বিবস্সবন্তু ও আলোচ্য বিষক্স’
কুরাইশ বংশীয় কাক্ষেরদের মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নবুওয়াতের
ওপর ঈমান না আনা এবং জুলুম ও বিদৃপের মাধ্যমে তার মোকাবিলা করার পরিণামের
তয় দেখানোই এ আলোচনার লক্ষ। এর মধ্যে তয় দেখানোর দিকটি প্রবল ও সুস্পস্ট। কিনতু
বার বার তয় দেখানোর সাথে যুক্তি প্রদর্শনের মধ্যিমে বিষয়বস্তু বুঝাবার ব্যবস্থাও করা
হয়েছে।
তিনটি বিষয়ের ওপর যুক্তি প্রদর্শন করা হয়েছে ঃ
০. তাওহীদের ওপর বিশ্ব-জাহানের নিদর্শনাবনী ও সাধারণ বুগ্ধিবৃত্তির সাহায্যে।
০ আখেরাতের ওপর বিশ্ব-জাহানের নিদর্শনাবনী, সাধারণ . বুদ্ধিবৃত্তি ও মানুষের
নিজের অস্তিত্বের সাহায্যে
০ মুহান্মাদী নবুওয়াতের সত্যতার ওপর একথার ভিত্তিতে যে, তিনি নিজের
রিসানাতের ক্ষেত্রে এ সমস্ত কষ্ট সহ্য করছিলেন নিশ্বার্থভাবে এবং এ বিষয়ের ভিজিতে
যে, তিনি লোকদেরকে যেসব কথার প্রতি আহবান জানাচ্ছিলেন সেগুলো পুরোপুরি
যুক্তিসংগত ছিল এবং সেগুলো হণ করার মধ্যেই ছিল লোকদের নিজেদের কল্যাণ।
|. এ যুক্তি প্রদর্শনের শক্তির ওপর ভীতি প্রদর্শন এবং ভিরক্কার ও সতর্ক করার বিষয়বস্তু
অত্যন্ত জোরে শোরে বারবার উল্লেখ করা হয়েছে, যাতে হৃদয়ের তালা খুলে যায় এবং
যাদের মধ্যে সত্যকে গ্রহণ করার সামান্যতম যোগ্যতাও আছে তারা যেন কুফরীর ওপর
বহাল থাকতে না পারে৷
ইমাম আহমাদ, আবু দাউদ, নাসাঈ, ইবনে মাজাহ ও তাবারানী প্রমুখগণ মা”কাল
ইবনে ইয়াসার থেকে বর্ণনা করেছেন, নবী সাল্লান্লাহ আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,
০1১5115০৮2 অর্থাৎ, এ ইয়া-সীন স্রাটি কুরআনের হৃদয়। এটি ঠিক তেমনই একটি
উপমা যেমন সূরা ফাতিহাকে উম্মুল কুবআান বলা হয়েছে। ফাতিহাকে উদ্ষুল কুরআন
গণ্য করার কারণ হচ্ছে এই যে, তার মধ্যে কুরআন মজীদের সমস্ত শিক্ষার সংক্ষিপ্তসার
এসে থেছে। অন্যদিকে ইয়ামীনকে কুরআনের স্পন্দিত হৃদয় বলা হয়েছে এ জন্য যে,
কুরআনের দাওয়াতকে সে অত্যন্ত জোরেশোরে পেশ করে, যার ফলে জড়তা কেটে যায়
এবং প্রাণপ্রবাহ্ গতিশীল হয়।
এই হ্যরত মা”কাল ইবনে. ইয়াসার থেকেই হযরত ইমাম আহমাদ, আবু দাউদ ও
ইবনে মাজাহ বর্ণনা করেছেন যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,
19০১৯ ০০০2 ৯৮৬৮ ৮ “১ “তোমাদের মৃতদের ওপর সূরা ইয়া-সীন পাঠ
করো।” এর পেছনে যে কল্যাণ নিহিত রয়েছে তাহচ্ছে এই যে, এর মাধমে মরার সময়
মুসনমানের অন্তরে কেবলমাত্র ইসলামী আকীদ। বিশ্বাসই তাজা হয়ে যায় না বরং
বিশেষভাবে তার সামনে আখেরাতের পূর্ণ চিত্রও এসে যায় এবং মে জানতে পারে দুনিয়ার
জীবনের মনযিল অতিক্রম করে এখন সামনের দ্রিকে ব্ঃদে সব মনধিন পার হয়ে তাকে
যেতে হবে। এ কল্যাণকারিতাকে পূর্ণতা দান করার জন্ম আরবী জানে না এমন ব্যক্তিকে
সূরা ইয়াসীন শুনাবার সাথে সাথে ভার অনুবাদ শুনিয়ে দেয়া উচিত। এভাবে উপদেশ দান
ও স্মরণ করিয়ে দেবার হক পুরোপুরি আদায় হয়ে যায়।
সুরা সাফফাত – বিষয়বন্তর ও বত্তচ্ব্য বিষয়
সে সময় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের তাওহীদ ও আখেরাতের দাওয়াতের
জবাব দেয়া হচ্ছিল নিকৃষ্ট ধরনের রঙ-তামাসা ও ঠা্্রা-বিদ্ুপের মাধ্যমে। তাঁর
রিসালাতের দাবী জোরে-শোরে অস্বীকার করা হচ্ছিন। এ জন্য মক্কার কাফেরদেরকে
অত্যন্ত কঠোরভাবে সতর্ক করে দেয়া হয়েছে এবং শেষে তাদেরকে এ মর্যে জানিয়ে দেয়া
হয়েছে যে, যে পয়গম্থরকে আজ তোমরা বিদুপ করছো খুব শিগৃগির তোমাদের চোখের
সামনেই তিনি তোমাদের ওপর বিজয় লাভ করবেন এবং তোমরা নিজেরাই আল্লাহর
সেনাদলকে তোমাদের গৃহের আইিনায় প্রবেশ করতে দেখবে। (১৭১-১৭৯ আয়াত) এমন
(এক সময় এ ঘোষণা দেয়া হয় যখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সাফল্যের
(লক্ষণ বহু দূরেও কোথাও দৃষ্টিগোচর হয়নি। মুসলমানরা যোদেরকে এ আয়াতে আল্লাহর
সেনাদল বলা হয়েছে) ভয়াবহ জুলুম-নির্যাতনের শিকার হচ্ছিল। তাদের তিন-চতুর্থাংশ
দেশ ত্যাগ করেছিল। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সাথে বড় জোর ৪০-৫০
জন সাহাবী মন্কায় থেকে গিয়েছিলেন এবং চরম অসহায় অবস্থার মধ্যে সবরকমের
উত্ীড়ন-নিগীড়ন বরদাশত করে যাচ্ছিলেন। এহেন অবস্থায় বাহ্যিক কার্যকারণগুন্দো
প্রত্যক্ষ করে কোন ব্যক্তি ধারণা করতে পারতো না যে, শেষ পর্যন্ত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহ
আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও তাঁর সহায় স্লহীন ক্ষুদ্র দলটি বিজয় লাভ করবে। বরং
্রত্যক্ষকারীরা মনে করছিল, এ আন্দোলনের সমাধি মকার পার্বত্য উপত্যকার মধ্যেই
রচিত হয়ে যাবে। কিন্তু ১৫-১৬ বছরের বেশী সময় অতিবাহিত হয়নি, মক্কা বিজয়ের
সময় ঠিক সে একই ঘটনা ঘটে গেদো যে ব্যাপারে কাফেরদেরকে আগেই জানিয়ে দেয়া
হয়েছিল।
সতর্কবাণী উচ্চারণ করার সাথে সাথে আল্লাহ এ সূরায় পুরোপুরি ভারসাম্য রক্ষা করে
বুঝাবার ও উত্সাহিত-উদ্দীপিত করার দায়িত্ব পা্দন করেছেন। তাওহীদ ও আখেরাত
বিশ্বাসের নির্তুলতার সপক্ষে সংক্ষি ও হৃদয়গ্রাহী যুক্তি পেশ করেছেন। মুশরিকদের
আকীদা-বিশ্বাসের সমালোচনা করে তারা কেমন বাজে অর্থহীন বিষয়ের প্রতি বিশ্বাস
স্থাপন করেছে সে সম্পর্কে তাদেরকে সজাগ করেছেন। তাদের এসব বিত্ান্তি ও ত্রষ্টতার
ফল তাদেরকে জানিয়ে দিয়েছেন। এ সংগে ঈমান ও সব্কাজের ফল কত মহান ও
গৌরবময় তা শুনিয়ে দিয়েছেন। তারপর এ প্রসংগে ইতিহাস থেকে এমন সব উদাহরণ
তুলে ধরেছেন যা থেকে জানা যায় আল্লাহ্ তার নবীদের এবং তাঁদের সম্পদায়ের সাথে
কি ব্যবহার করেছেন, নিজের বিশ্বস্ত বান্দাদেরকে তিনি কিভাবে পুরস্কৃত করেছেন এবং
কিভাবে তাদের প্রতি মিথ্যা আরোপকারীদেরকে শাস্তি দিয়েছেন।
যে এ্রতিহাসিক ঘটনাটি এ সূরায় বর্ণনা করা হয়েছে তার মধ্যে সবচেয়ে বেশী
শিক্ষণীয় বিষয়টি হচ্ছে, হযরত ইবরাহীম আলাইহিস সালামের পবিত্র জীবনের এ
গুরুতৃপূর্ণ ঘটনাটি যে, আল্লাহর একটি ইশারাতেই তিনি নিজের একমাত্র পুত্রকে কুরবানী
দিতে প্রস্তুত হয়ে গিয়েছিলেনা এর মধ্যে কেবলমাত্র কুরাইশদের যেসব কাফেররা হযরত
ইব্রাহীমের (আ) সাথে নিজেদের বংশগত সম্পর্কের জন্য অহংকার করতো তাদের
জন্যই শিক্ষা ছিন তা নয় ঘরং এমন মুসলমানদের জন্যও শিক্ষা ছিল যারা আল্লাহ্ ও তাঁর
রসূলের প্রতি ঈমান এনেছরিলেন। এ ঘটনা শুনিয়ে তাদেরকে বলা হয়েছে, ইসলামের তাৎপর্
ও তার মূল প্রাণশক্তি কি এবং তাকে নিজেদের দীন তথা জীবন ব্যবস্থায় পরিণত করার
পর একজন সত্যিকার মু*মিনকে কিভাবে আল্লাহর সন্তুষ্টির খাতিরে নিজের সবকিছু
কুরবানী করে দেবার জন্য প্রস্তুত থাকতে হয়।
সূরার শেষ আয়াতগুলো কাফেরদের জন্য নিছক সতর্কবাণীই ছিল না বরং যেসব
মুমিন নবী সাগ্লান্লাহ আলাইহি ওয়া সাল্লামকে সমর্থন ও তাঁর সাথে সহযোগিতা করে
চরম নৈরাশ্যজনক অবস্থার মোকাবিলা করছিলেন তাঁদের জন্যও ছিল সুসংবাদ। তাঁদেরকে
এসব আয়াত শুনিয়ে সুসংবাদ দেয়া হয়েছে যে, কাজের সূচনা করতে গিয়ে তাঁদেরকে
যেসব বিপদ আপদের মুখোমুখি হতে হচ্ছে তাতে যেন তাঁরা ভীত-সন্তস্ত হয়ে না পড়েন,
শেষ পর্যন্ত বিজয় তাঁদেরই পদচু্ন করবে এবং বাতিলের যে পতাকাবাহীদেরকে বর্তমানে
বিজয়ীর আসনে দেখা যাচ্ছে, তারা তাঁদেরই হাতে পরাজিত ও পুদস্ত হবে। মাত্র কয়েক
বছর পরেই ঘটনাবলী ভানিয়ে দিল, এটি নিছক আল্লাহর সান্তবনাবাণীই ছিল না বরং ছিল
একটি বাস্তব ঘটনা এবং পূর্বাহ্েই এর খবর দিয়ে তাদের মনোবল শক্তিশালী ও জোরদার
বরা হয়েছিল।
তাফহিমুল কুরআন ১৪ খ. সুরা হামিম, শূরা, জুখরফ, দুখান, জাসিয়া, আহকাফ
সুরা হামিম – আলোচ্য বি্বক্ম ও মুল বক্তব্য
‘উতবার এই কথার জবাবে আল্লাহর পক্ষ থেকে যে বক্তব্য নাধিল হয়েছে তাতে সে
নবীকে (সা) যে অর্থহীন কথা বলেছে সেদিকে আদৌ দৃষ্টিপাত করা হয়নি। কারণ, সে যা
বলেছিলো তা ছিন প্রকৃতপক্ষে নবীর (সা) নিয়ত ও জ্ঞান-বুদ্ধির ওপর হামলা। তার গোটা
বক্তব্যের পেছনে এই অনুমান কাজ করছিল যে, তাঁর নবী হওয়া এবং কুরআনের অহী
হওয়ার কোন সম্ভাবনাই নেই। তাই অনিবার্যরূপে তাঁর এই আন্দোলনের চালিকা শক্তি
হয় ধন-সম্পদ এবং শাসন ক্ষমতা ও কর্তৃত্ব লাভের প্রেরণা, নয়তো তাঁর জ্ঞান-বুদ্ধিই
লোপ পেয়ে বসেছে (নাউযুবি্লাহ)। প্রথম ক্ষেত্রে সে নবীর (সা) সাথে বিকিকিনির কারবার
করতে চাচ্ছিলো। দ্বিতীয় ক্ষেত্রে সে এ কথা বলে নবীকে সো) হেয় করছিলো যে, আমরা
নিজের খরচে আপনার উন্মাদ রোগের চিকিৎসা করে দিচ্ছি। এ কথা সুস্পষ্ট যে,
বিরোধীরা যখন এ ধরনের মুর্থতার আচরণ করতে থাকে তখন তাদের এ কাজের জবাব
দেয়া শরীফ সন্্ান্ত মানুষের কাজ হয় না। তার কাজ হয় তাদেরকে সম্পূর্ণরূপে উপেক্ষা
করে নিজের বক্তব্য তুলে ধরা। কুরআনের দাওয়াতকে ব্যথ করার জন্য মক্কার কাফেরদের
পক্ষ থেকে সে সময় চরম হঠকারিতা ও অসঙ্চরিত্রের মাধ্যমে যে বিরোধিতা করা
হচ্ছিলো ‘উতবার বক্তব্য উপেক্ষা করে এখানে সেই বিরোধিতাকে আলোচ্য বিষয় হিসেবে
গ্রহণ করা হয়েছে। তারা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি গুয়া সাল্লামকে বলতো, আপনি যাই
করেন না কেন আমরা আপনার কোন কথাই শুনবো না। আমরা আমাদের মনের গায়ে
চাদর ঢেকে দিয়েছি এবং কান বন্ধ করে দিয়েছি। আমাদের ও আপনার মাঝে একাট
প্রাচীর আড়াল করে দাড়িয়েছে, যা আপনাকে ও আমাদের কখনো এক হতে দেবে না।
তারা তকে স্পষ্টভাবে জানিয়ে দিয়েছিলো, আপনি আপনার দাওয়াতের কাজ চালিয়ে
যান, আপনার বিরোধিতায় আমাদের পক্ষে সম্ভবপর সবই আমরা করবো।
তারা নবীকে (সা) পরাস্ত করার উদ্দেশ্যে যে কর্মসূচী তৈরী করেছিলো তা হচ্ছে,
যখনই তিনি কিংবা তাঁর অনুসারীদের কেউ সর্বসাধারণকে কুরআন শুনানোর চেষ্টা করবেন
তখনই হৈ চৈ ও হট্টগোল সৃষ্টি করতে হবে এবং এতো শোরগোল করতে হবে যাতে
কানে যেন কোন কথা প্রবেশ না করে।
কুরআন মজীদের আয়াত সমূহের উন্টা পান্টা অর্থ করে জনসাধারণের মধ্যে নানা
রকম বিভ্রান্তি ছড়ানোর কাজ তারা পূর্ণ তৎপরতার সাথে চালিয়ে যাচ্ছিলো ।..কোন কথা
বলা হলে তারা তাকে ভিন রূপ দিতো। সরল সোজা কথার বাঁকা অথ করতো পূর্বাপর
প্রস থেকে বিচ্ছির করে এক স্থানের একটি শব্দ এবং আরেক স্থানের একটি বাক্যাংশ
নিয়ে তার সাথে নিজের পক্ষ থেকে আরো অধিক কথা যুক্ত করে নতুন নতুন বিষয়বন্তূ
তৈরী করতো যাতে কুরআান ও তার উপস্থাপনকারী রাসূল সম্পর্কে মানুষের মতামত
খারাপ করা যায়।
অদ্ভুত ধরনের আপত্তিসমূহ উ্থাপন করতো যার একটি উদাহরণ এ সূরায় পেশ করা
হয়েছে। তারা বলতো, আরবী ভাষাভাষী একজন মানুষ যদি আরবী ভাষায় কোন কথা
শোনায় ভাতে মু’জিযার কি থাকতে পারে? আরবী তো তার মাতৃভাষা যে কেউ ইচ্ছা
করলে তার মাতৃভাষায় একটি বাণী রচনা করে ঘোষণা করতে পারে যে, সেই বাণী তার
কাছে আল্লাহ্র পক্ষ থেকে নাযিল হয়েছে। মুনজিযা বলা যেতো কেবল তখনই যখন হঠাৎ
কোন ব্যক্তি তার অজানা কোন ভাষায় একটি বিশুদ্ধ ও উত সাহিত্য রস সমৃদ্ধ বৃতা
শুরু করে দিতো। তখনই বুঝা যেতো, এটা ভার নিজের কথা নয়, বরং তা ওপরে
কোথাও থেকে তার ওপর নাযিল হচ্ছে।
অযৌক্তিক ও অবিবেচনা প্রসূত এই বিরোধিতার জবাবে যা বলা হয়েছে তার সারকথা
হলো £
0) এ বাণী আল্লাহরই পক্ষ থেকে এবং আরবী ভাষায় নাধিলবৃতি। এর মধ্যে যেসব
সত্য স্পষ্টভাবে খোলামেলা বর্ণনা! করা হয়েছে মূর্খেরা তার মধ্যে জ্ঞানের কোন আলো
দেখতে পায় না। কিন্তু জ্ঞান-বুদ্ধির অধিকারীরা সে আলো দেখতে পাচ্ছে এবং তা ছারা
উপকৃতও হচ্ছে। এটা আল্লাহর রহমত যে, মানুষের হিদায়াতের জন্য তিনি এ বামী নাযিল
করেছেন। কেউ তাকে অকল্যাণ ভাবলে সেটা তার নিজের দুর্ভাগ্য। যারা এ বাণী কাজে
লাগিয়ে উপকৃত হচ্ছে তাদের জন্য সু-খবর। কিন্তু যারা এ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে
তাদের সাবধান হওয়া উচিতা।
(২) তোমরা যদি নিজেদের মনের ওপর পর্দা টেনে এবং কান বধির করে দিয়ে থাকো,
সে অবস্থায় নবীর কাজ এটা নয় যে, যে শুনতে আথহী তাকে শুনাবেন আর যে শুনতে ও
বুঝতে আগ্রহী নয় জোর করে তার মনে নিজের কথা প্রবেশ করাবেন। তিনি তোমাদের
মতই একজন মানুষ। যুরা শুনতে আগ্রহী তিনি কেবল তাদেরকেই শুনাতে পারেন এবং
যারা বুঝতে আথহী কেবল তাদেরকেই বুঝাতে পারেন।
(৩) তোমরা নিজেদের চোখ বন্ধ করে নাও আর মনের ওপর পর্দা টেনে দাও প্রকৃত
সত্য এই যে, একজনই মাত্র তোমাদের আল্লাহ, তোমরা অন্য কোন আল্লাহর বান্দা নও।
তোমাদের হঠকারিতার কারণে এ সত্য কখনো পরিবর্তিত হওয়ার নয়। তোমরা যদি এ
কথা মেনে নাও এবং সে অনুসারে নিজেদের কাজকর্ষ শুধরে নাও তাহলে নিজেদেরই
কল্যাণ সাধন করবে। আর যদি না মানো তাহলে নিজেরাই ধ্বংসের মুখোমুখি হবে।
(8) তোমরা কার সাথে শিরক ও কুফরী করছো সে বিষয়ে কি তোমাদের কোন
অনুভূতি আছে? তোমরা কি সেই আল্লাহ্র সাথে শিরক ও কুফরী করছো যিনি বিশাল ও
অসীম এই বিশ্বজাহান সৃষ্টি করেছেন, যিনি যমীন ও আসমানের অষ্টা, যার সৃষ্ট কল্যাণ
সমূহ দ্বারা তোমরা এই পৃথিবীতে উপকৃত হচ্ছো এবং যার দেয়া রিষিকের ছারা
প্রতিপালিত হচ্ছোঃ তাঁরই নগণ্য সৃষ্টি সমূহকে তোমরা তীর শরীক বানাচ্ছো আর এ
বিষয়টি বুঝানোর চেষ্টা করলে জিদ ও হঠকারিতা করে মুখ ফিরিয়ে লিচ্ছো?
(৫) ঠিক আছে, যদি মানতে প্রস্তুত না হও সে ক্ষেত্রে আদ ও সামূদ জাতির ওপর যে
ধরনের আযাব এসেছিল অকম্মাত সে ধরনের আযাব আপতিত হওয়া সম্পর্কে সাবধান
হয়ে যাও। এ আযাবও তোমাদের অপরাধের চুড়ান্ত শাস্তি নয়। বরং এর পরে আছে হাশরের
জবাবদিহি ও জাহান্নামের আগুন।
(৬) সেই মানুষ বড়ই দুর্ভাগা যার পেহনে এমন সব জিন ও মানুষ শয়তান লেগেছে
যারা তাকে তার চারদিকেই শ্যামল-সবৃজ মনোহর দৃশ্য দেখায়, তার নিবুদ্ধিতাকে তার
সামনে সুদৃশ্য বানিয়ে পেশ করে এবং তাকে কখনো সঠিক চিন্তা করতে দেয় না। অন্যের
কথা শুনতেও দেয় না। এই শ্রেণীর নির্বোধ লোকেরা আজ এই পৃথিবীতে পরস্পরকে
উৎসাহ দিচ্ছে ও লোভ দেখাচ্ছে এবং প্রত্যেকেই পরস্পরের প্রশ্রয় পেয়ে দিনকাল ভালই
কাটাচ্ছে। কিন্তু কিয়ামতের দিন যখন দুর্ভাগ্যের পালা আসবে তখন তাদের প্রত্যেকেই
বলবে, যারা আমাকে বিভ্রান্ত করেছিলো তাদের হাতে পেলে পায়ের তলায় পিষে
ফেলতাম।
(৭) এই কুরআন একটি অপরিবর্তনীয় গ্রহথ। তোমরা নিজেদের হীন চত্রান্ত এবং মিথ্যার
অন্্র দিয়ে তাকে পরাস্ত করতে পারবে না। বাতিল পেছন থেকে আসুক, মুখোশ পরে
আসুক কিংবা পরোক্ষভাবে আক্রমণ করুক কখনো তাকে পরাজিত করতে সক্ষম হবে
না।
(৮) তোমরা যাতে বুঝতে পার সে জন্য কুরআনকে আজ তোমাদের নিজেদের ভাষায়
পেশ করা হচ্ছে। অথচ তোমরা বলছো, কোন অনারব ভাষায় তা নাযিল হওয়া উচিত
ছিল। কিন্তু তোমাদের হিদায়াতের জন্য যদি আমি কুরআনকে আরবী ছাড়া ভিন্ন কোন
ভাষায় নাযিল করতাম তাহলে তোমরাই বলতে, এ কোন ধরনের তামাশা, আরব জাতির
হিদায়াতের জন্য অনারব ভাষায় বক্তব্য পেশ করা হচ্ছে যা এখানকার কেউই বুঝে না।
এর অর্থ, হিদায়াত লাভ আদৌ তোমাদের কাম্য নয়। কুরআনকে না মানার জন্য নিত্য
নতুন বাহানা তৈরী করছো মাত্র।
(৯) তোমরা কি কখনো এ বিষয়টি ভেবে দেখেছো, যদি এটাই সত্য বলে প্রমাণিত
হয় যে, এ কুরআন আল্লাহর পক্ষ থেকে এসেছে, তাহলে তা অস্বীকার করে এবং তার
বিরোধিতায় এতদূর অথসর হয়ে তোমরা কোন পরিণতির মুখোমুখি হবে?
(১০) আজ তোমরা এ কুরআনকে মানছো না। কিন্তু অচিরেই নিজের চোখে দেখতে
পাবে, এ কুরআনের দাওয়াত দশ দিগন্তে ছড়িয়ে পড়েছে এবং তোমরা নিজেরা তার কাছে
পরাজিত হয়ে গিয়েছো। তখন তোমরা বুঝতে পারবে, ইতিপূর্বে তোমাদের যা বলা
হয়েছিল তা ছিল সত্য।
বিরোধীদেরকে এসব জবাব দেয়ার সাথে সাথে এই চরম প্রতিকূল পরিবেশে
ঈমানদারগণ এবং নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিজে যে সমস্যাবলীর সম্মুখীন
ছিলেন সেদিকেও দৃষ্টি দেয়া হয়েছে। মুমিনদের পক্ষে সে সময় তাবলীগ ও প্রচার তো
দূরের কথা ঈমানের পথে টিকে থাকাও অত্যন্ত কঠিন হয়ে পড়ছিলো। যে ব্যক্তি সম্পর্কেই
প্রকাশ হয়ে পড়তো যে, সে মুসলমান হয়ে গিয়েছে সে-ই শাস্তির যাঁতাকলে পিষ্ট হতো।
শত্রুদের ভয়াবহ জোটবদ্ধতা এবং সর্বত্র বিস্তৃত শক্তির ম্েকাবিলায় তারা নিজেদেরকে
একেবারেই অসহায় ও বন্ধুহীন মনে করছিলো। এই পরিস্থিতিতে প্রথমত এই বলে
তাদেরকে সাহস যোগানো হয়েছে যে, তোমরা সত্যি সত্যিই বান্ধব ও সহায়হীন নও। বরং
যে ব্যক্তিই একবার আল্লাহকে তার রব মেনে নিয়ে সেই আকীদা ও পথ দৃঢ়ভাবে আকড়ে
ধরে থাকে তার কাছে আল্লাহর ফেরেশতা নাধিল হয় এবং দুনিয়া থেকে শুরু করে
আখেরাত পর্যন্ত তার সাথে থাকে। অতপর তাকে সাহস ও উৎসাহ যোগানো হয়েছে এ
কথা বলে যে, সেই মানুষ সর্বোতবৃষ্ট যে নিজে সৎ কাজ করে, অন্যদের আল্লাহর দিকে
আহ্বান জানায় এবং সাহসিকতার সাথে বলে, আমি মুসলমান।
সেই সময় যে প্রশ্নটি নবীর (সা) সামনে অত্যন্ত বিব্রতকর ছিল তা হচ্ছে, এসব জগদ্দল
পাথর যখন এ আন্দোলনের পথে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে তখন এসব পাথরের মধ্যে দিয়ে
ইসলামের প্রচার ও প্রসারের রাস্তা কিভাবে বের করা যাবে? এ প্রশ্নের সমাধানের জন্য
নবীকে (সা) বলা হয়েছে, এসব প্রদর্শনীমূলক বাধার পাহাড় বাহ্যত অত্যন্ত কঠিন বসে
মনে হয়। কিন্তু উত্তম নৈতিক চরিত্রের হাতিয়ার এমন হাতিয়ার যা এঁ সব বাধার পাহাড়
চর্ণবিচর্ণ করে গলিয়ে দেবে। ধৈর্যের সাথে উত্তম নৈতিক চরিত্রকে কাজে লাশাও এবং
যখনই শয়তান উত্তেজনা সৃষ্টি করে অন্য কোন হাতিয়ার ব্যবহার করতে উষ্কানি দেবে
তখনই আল্লাহর কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করো।
তাফহিমুল কুরআন পিডিএফ ১৫তম খন্ড – সুরা মুহাম্মদ থেকে সুরা আত তুর
সুরা মুহাম্মদ -বিষয়বস্তু ও মুল বক্তব্য
এহেন পরিস্থিতিতে সূরাটি নাধিল করা হয়েছিল। ঈমানদারদেরকে যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত
করা। এবং এ বিষয়ে প্রাথমিক পথনির্দেশনা দেয়াই এর আলোচ্য ও বক্তব্য। এ দিকটি
বিচার করে এর নাম “সুরা কিতাল”ও রাখ! হয়েছে। এতে ধারাবাহিকতাবে নিম্রোক্ত
বিষয়সমূহ উল্লেখ করা হয়েছে।
সূরার প্রথমেই বলা হয়েছে যে, এখন দু’টি দলের মধ্যে মোকাবিলা হচ্ছে। এ দু’টি
দলের মধ্যে একটি দলের অবস্থান এই যে, তারা সত্যকে মেনে নিতে অস্বীকার করেছে
এবং আল্লাহর পথে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে! কিন্তু অপর দলটির অবস্থান হলো, আল্লাহ্
তা’আলার পক্ষ থেকে তাঁর বান্দা মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ওপর যে
সত্য নাধিল হয়েছিল তা তারা মেনে নিয়েছে। এখন আল্লাহ তা’আলার সুস্পষ্ট সিদ্ধান্ত
হলো, প্রথমোক্ত দলটির সমস্ত চেষ্টা-সাধনা ও কাজ-কর্ম তিনি নিষ্ষল করে দিয়েছেন
এবং শেষোক্ত দলটির অবস্থা সংশোধন করে দিয়েছেন।
এরপর মুসলমানদের সামরিক বিষয়ে প্রাথমিক নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। তাদেরকে
আল্লাহর সাহায্য ও দিকনির্দেশনার নিশ্চয়তা দেয়া হয়েছে। আল্লাহর পথে কুরবানী পেশ
করার জন্য তাদেরকে সর্বোত্তম প্রতিদানের আশ্বাস দেয়া হয়েছে। তাদের এ বলে সান্ত্বনা
দেয়া হয়েছে যে, ন্যায় ও সত্যের পথে তাদের প্রচেষ্টা বৃথা যাবে না। বরৎ দুনিয়া ও
আখেরাত উভয় জায়গাতেই তারা ক্রমানয়ে এর অধিক তাল ফল লাভ করবে।
তারপর কাফেরদের সম্পর্কে বলা হয়েছে যে, তারা আল্লাহর সাহায্য ও দিকনির্দেশনা
থেকে বঞ্চিত। ঈমানদারদের বিরদ্ধে তাদের কোন প্রচেষ্টাই কার্যকর হবে না। তারা দুনিয়া
ও আখেরাত উভয় ক্ষেত্রেই অত্যন্ত খারাপ পরিণামের সম্মুধীন হবে। তারা আল্লাহর
নবীকে মক্কা থেকে বের করে দিয়ে মনে করেছিলো যে, তারা বড় রকমের সফলতা লাত
করেছে। অথচ এ কাজ করে তারা প্রকৃতপক্ষে নিজেরা নিজেদের জন্য বড় রকমের ধ্বংস
ডেকে এনেছে।
এরপর মুনাফিকদের উদ্দেশ করে কথা বলা হয়েছে। যুদ্ধের নির্দেশ আসার পূর্বে এসব
মুনাফিক নিজেদেরকে বড় .মুসলমান বলে জাহির করতো । কিন্তু এ নির্দেশ আসার পরে
তারা ঘাবড়ে গিয়ে নিজেদের নিরাপত্তা ও কল্যাণ চিন্তায় কাফেরদের সাথে ষড়যন্ত্র করতে
শুরু করেছিল যাতে তারা নিজেদেরকে যুদ্ধের বিপদ. থেকে রক্ষা করতে পারে। তাদেরকে
স্পষ্টভাবে সাবধান করে দেয়া হয়েছে যে, যারা আল্লাহ এবং তীর দীনের সাথে মুন্যাফিকীর
আচরণ করে তাদের কোন আমলই আল্লাহর কাছে গৃহীত হয় শা। এখানে যে মৌলক |
প্রশ্নে ঈমানের দাবীদার প্রতিটি ব্যক্তির পরীক্ষা হচ্ছে তা হলো, সে ন্যায় ও সত্যের সাথে
[আছে না বাতিলের সাথে আছে? তার সমবেদনা ও সহানুভূতি মুসলমান ও ইসলামের
প্রতি না কাফের ও কুফরীর প্রতি। সে নিজের ব্যক্তি সত্তা ও স্বার্থকেই বেশী ভালবাসে না
কি যে ন্যায় ও সত্যের প্রতি ঈমান আনার দাবী সে করে তাকেই বেশী ভালবাসে? এ
পরীক্ষায় যে ব্যক্তি মেকী প্রমাণিত হবে আল্লাহ্র কাছে তার নামায, রোষা এবং যাকাত
কোন প্রতিদান লাভের উপযুক্ত বিবেচিত হওয়া তো দূরের কথা সে আদৌ ঈমানদারই ‘নয়।
অতপর মুসলমানদের উপদেশ দেয়া হয়েছে যে, তারা যেন নিজেদের সংখ্যান্সতা ও
সহায় স্লহীনতা এবং কাফেরদের সংখ্যাধিক্য ও সহায় সনের প্রাচ্য দেখে সাহস না
হারায় এবং তাদের কাছে সন্ধির প্রস্তাব দিয়ে নিজেদের দুর্বলতা প্রকাশ না করে। এতে
ইসলাম ও মুসলমানদের বিরুদ্ধে তাদের. দুঃসাহস আরো বেড়ে যাবে। বরং তারা যেন
আল্লাহর ওপর নির্তর করে বাতিলকে রুখে দাঁড়ায় এবং কুফরের এ-আগ্রাসী শক্তির সাথে
সংঘর্ষে নিশ্ত হয়। আল্লাহ মুসলমানদের সাথে আছেন। তারাই বিজয়ী হবে এবং তাদের
সাথে সংঘাতে কুফরী শক্তি চূর্ণ-কিচূর্ণ হয়ে যাবে।
সর্বশেষে মুসলমানদেরকে আল্লাহর পথে অর্থ ব্যয় করার আহ্বান জানানো হয়েছে।
যদিও সে সময় মুনলমানদের আর্থিক অবস্থা অত্যন্ত নাজুক ছিল। কিন্তু সামনে প্রশ্ন ছিল
এই যে, আরবে ইসলাম এবং মুসলমানরা টিকে থাকবে কি থাকবে না। এ প্রশ্নের গুরুত্ব
ও নাজুকতার দাবী ছিল এই যে, মুসলমানরা নিজেদেরকে এবং নিজেদের দীনকে কুফরের
আধিপত্যের হাত থেকে রক্ষা করার এবং আল্লাহর দীনকে বিজয়ী করার জন্য তাদের
জীবন কুরবানী করবে ও যুদ্ধ প্রস্তুতিতে নিজেদের সমস্ত সহায় সম্পদ যথা সম্ভব
অকৃপণভাবে কাজে লাগাবে। সুতরাং মুসলমানদের উদ্দেশ করে বলা হয়েছে যে, এ মুহূর্তে
যে ব্যক্তি কৃপণতা দেখাবে সে প্রকৃতপক্ষে আল্লাহর কোন ক্ষতিই করতে পারবে না, বরং
নিজেকে ধ্বংসের মধ্যে নিক্ষিপ্ত করবে। আল্লাহ মানুষের মুখাপেক্ষী নন। কোন একটি দল
বা গ্রোষ্ঠী যদি তার দীনের জন্য কুরবানী পেশ করতে টালবাহানা করে তাহলে আল্লাহ
তাদের অপসারণ করে অপর কোন দল বা গোষ্ঠীকে ‘তাদের স্থুলাভিষিক্ত করবেন।
তাফহীমুল কুরআন ১৬তম খন্ড – সুরা আন নাজম থেকে সুরা আল মুজাদালাহ
সুরা আন নাজম – বিষয়বস্তু ও সুল্ম বক্তব্য
মক্কার কাফেররা কুরআন ও হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের প্রতি
যে আচরণ ও নীতি অবলম্বন করে চলছিলো তাদের & নীতি ও আচরণের ত্রান্তি সম্পর্কে
সাবধান করে দেয়াই এ সূরার মূল বিষয়বস্তু
বক্তব্য শুরু করা হয়েছে এভাবে যে, মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বিভ্রান্ত
বা পথশ্রষ্ট ব্যক্তি নন যেমনটি তোমরা রটনা করে বেড়াচ্ছো। আর ইসলামের এ শিক্ষা ও
আন্দোলন তিনি নিজে মনগড়া ভাবে প্রচার করছেন না যেমনটা তোমরা মনে করে বসে
আছ। বরং তিনি যা কিছু পেশ করছেন তা নির্ভেজাল অহী ছাড়া আর কিছুই নয়। এ অহী
তাঁর ওপর নাষিল করা হয়। তিনি তোমাদের সামনে যে সব সত্য বর্ণনা করেন তা তাঁর
অনুমান ও ধারণা নির্ভর ময়, বরং নিজ চোখে দেখা অকাট্য সত্য। যে ফেরেশতার মাধ্যমে
তাঁকে এ জ্ঞান দেয়া হয় তাকে তিনি নিজ চোখে দেখেছেন। তাঁকে সরাসরি তাঁর রবের
বড় বড় লিদর্শনসমূহ পরিদর্শন করানো হয়েছে। তিনি যা কিছু বলছেন চিন্তা-ভাবনা করে
বল্লছেন না, দেখে বলছেন। যে জিনিস একজন অন্ধ দেখতে পায় না অথচ একজন চক্ষুম্যান
ব্যক্তি দেখতে পায়, সে জিনিস নিয়ে চক্ষুম্মানের সাথে অন্ধের বিতর্কে লিগ হওয়া যেমন,
যদ সা) এর সাথে ভাওহীদ আখেরাত প্রভৃতি বিষয় সয়ে তোমাদের তর্ক করা
তেমনি।
এরপর ক্রমান্বয়ে তিনটি বিষয়ে বক্তব্য পেশ করা হয়েছে £
প্রথমত শ্রোতাদের বুঝানো হয়েছে তোমরা যে ধর্মের অনুসরণ করছো তা কতকণশুলো
ধারণা ও মনগড়া জিনিসের ওপর প্রতিষ্ঠিত। তোমরা লাত, মানাত ও উয্যার মত
কয়েকটি দেব-দেবীকে উপাস্য বানিয়ে রেখেছো অথচ প্রকৃত খোদায়ীর ক্ষেত্রে তাদের
নাম মাতরও অংশ নেই। তোমরা ফেরেশতাদেরকে আল্লাহর কন্যা ধরে নিয়ে বসে আছ!
কিন্তু নিজেদের কন্যা সন্তান থাকাকে তোমরা লজ্জা ও অপমানের বিষয় বলে মনে কর।
তোমরা নিজের পক্ষ থেকে ধরে নিয়েছো যে, তোমাদের এ উপাস্যরা আল্লাহ তা”আলার
কাছে তোমাদের কাজ আদায় করে দিতে পারে। অথচ আল্লাহর নৈকট্য লাতকারী সমস্ত
ফেরেশতা সম্মিলিতভাবেও আল্লাহকে তাদের কোন কথা মানতে বাধ্য বা উদুদ্ধ করতে
পারে না। তোমাদের অনুসৃত এ ধরনের আকীদা-বিশ্বাসের কোনটিই কোন জ্ঞান বা দলীল
প্রমাণের ওপর প্রতিষ্ঠিত নয় এগুলো নিছক তোমাদের প্রবৃত্তির কিছু কামনা-বাসনা যার
কারণে তোমরা কিছু ভিত্তিহীন ধারণাকে বাস্তব ও সত্য মনে করে বসে আছ। এটা একটা
মস্ত বড় ভুল। এ ভুলের মধ্যেই তোমরা নিমজ্জিত আছ। সত্যের সাথে যার পূর্ণ সামঞ্জস্য
আছে সেটিই প্রকৃত আদর্শ। সত্য মানুষের প্রবৃত্তি ও আকাংখার তাবেদার হয় না যে, দে
যাকে সত্য মনে করে বসবে সেটিই সত্য হবে। প্রকৃত সত্যের সাথে সং্গতির জন্য অনুমান
ও ধারণা কোন কাজে আসে না। এজন্য দরকার জ্ঞানের সে জ্ঞানই তোমাদের সামনে
পেশ করা হলে তোমরা তা থেকে মুখ ফিরিয়ে এবং উন্টা সে ব্যক্তিকেই পথভ্রষ্ট সাব্যস্ত
করো যে তোমাদের সত্য কথা বলছেন) তোম’দের এ ভ্ান্তিতে নিমজ্সিত হওয়ার মূল
কারণ হলো, আখেরাতের কোন চিন্তাই তোমাদের নেই। কেবল দুনিয়াই তোমাদের
উন্দেশা হয়ে আছে। তাই সত্যের জ্ঞান অর্জনের আকাংখা যেমন তোমাদের নেই, তেমনি
তোমরা যে আকীদা-বিশ্বাসের অসুসরণ করছো তা সত্যের সাথে সংগতিপূর্ণ হোক বা না
হোক তারও কোন পরোয়া তোমাদের নেই
দ্বিতীয়ত, লোকদের বলা হয়েছে যে, আল্লাহই সমথ বিশ্ব-জাহানের একচ্ছত্র মালিক
মোক্তার। যে তাঁর পথ অনুসরণ করছে সে সত্য পথ প্রাপ্ত আর যে তার পথ থেকে বিচ্যুত
সে পথ ত্রষ্ট। পথত্রষ্ট ব্যক্তির পথতরষ্টতা এবং সত্য-পন্থীর সত্য পথ অনুসরণ তীর অজানা
নয়। তিনি প্রত্যেকের কাজ কর্মকে জানেন। তাঁর কাছে ন্যায়ের প্রতিফলন অকল্যাণ এবং
সুকৃতির প্রতিদান কল্যাণ লাত অনিবার্য ।
তুমি নিলে নিজেকে যা-ই মনে করে থাকো এবং নিজের মুখে নিজের পবিত্রতার যত
লঙ্কা চণ্ডড়া দাবিই_করো না কেন তা দিয়ে তোমার বিচার করা হবে না। বরং আল্লাহর
বিচারে তুমি মুস্তাবী কিনা তা দিয়ে তোমার বিচার করা হবে। তৃমি যদি বড় বড় গোনাহ
থেকে দূরে অবস্থান করো তাহলে তাঁর রহমত এত ব্যাপক যে, তিনি ছোট ছোট গোনাহ
ক্ষমা করে দেবেন।
মানুষের সামনে এজন্য পেশ করা হয়েছে যে, মানুষ যেন এবপ ভ্রান্ত ধারণা গোষ’
করে যে, মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম একটি সম্পূর্ণ নুন দীন নিয়ে
এসেছেন, বরং মানুষ যাতে জানতে পারে যে, এগুলো মৌলিক সত্য এবং আল্লাহর
নবীগণ সব সময় এ সত্যই প্রচার করেছেন। সাথে সাথে এসব সহীফা থেকে একথাও
উদ্ধৃত করা হয়েছে যে, আদ, সামূদ, নূহ ও হৃতের কওমের ধ্বংস হয়ে যাওয়া কোন
আকম্মিক দুর্ঘটনার ফল ছিল না। আজ মক্কার কাফেররা যে জুলুম ও সীমালহঘন থেকে
বিরত থাকতে কোন অবস্থাতেই রাজি হচ্ছে না, সে একই জুলুম ও সীমালহ্ঘনের
‘অপরাধেই আল্লাহ তা*আলা তাদের ধ্বংস করেছিলেন।
এসব বিষয় তুলে ধরার পর বজ্জৃতার সমাপ্তি টানা হয়েছে এ বথা বলে যে, চূড়ান্ত
ফায়সালার সময় অতি নিকটবর্তী হয়েছে। তা প্রতিরোধ করার মত কেউ নেই। চূড়ান্ত সে
মুহূর্তটি আসার পূর্বে মৃহাম্মাদ সান্নাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও কুরআনের মাধ্যমে
তোযাদেরকেও ঠিক তেমনিভাবে সাবধান করে দেয়া হচ্ছে যেতাবে পূর্ববর্তী লোকদের
সাবধান করা হয়েছিল। এখনি এ কথাগুলোই কি তোমাদের কাছে অভিনব মনে হয়?
এজন্যই কি তা নিয়ে তোমরা ঠাট্টা তামাসা করছো? একারণেই কি তোমরা তা শুনতে
চাও না, শোরগোল ও হৈ চৈ করতে থাকো। যাতে অন্য কেউও তা শুনতে না পায়?
নিজেদের এ নিরবৃদ্ধিতার জন্য তোমাদের কান্না আসে নাঃ নিজেদের এ আচরণ থেকে
বিরত হও, আল্লাহর সামনে নত হও এবং তীরই বন্দেগী করো।
এটা ছিল বক্তব্যের অত্যন্ত মর্মস্পশী উপসংহার যা শুনে কট্টর বিরোধীরাও নিজেদের
সংবরণ করতে পারেনি। তাই রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আল্লাহর বাণীর এ
অংশ পড়ে সিজদা করনে তারাও স্বতচূ্তভাবে সিজদায় পড়ে যায়।
তাফহীমুল কুরআন pdf বই গুলো আপনার প্রয়োজন হলে নিচে Leave a Reply এ গিয়ে Comment করুন । Enter your comment here… এখানে বিস্তারিত লিখুন, তাহলে আমরা আপনাকে বইটি পাঠিয়ে দিব, ইনশাআল্লাহ। ৫
Reviews
There are no reviews yet.